অবসরের পর রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা বলেছেন, কোনো কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এস কে সিনহা এ মন্তব্য করেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বাণীটি প্রকাশিত হয়।
চার পৃষ্ঠার ওই বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তাঁর শপথ থাকে না। তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গণ্য। আদালতের নথি সরকারি দলিল। তাই অবসর গ্রহণের পর আদালতের নথি নিজের কাছে সংরক্ষণ, পর্যালোচনা বা রায় প্রস্তুত করার অধিকার হারান। আশা করি, বিচারকগণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এমন বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকবেন।’
বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে এস কে সিনহা ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি শপথ নিয়েছিলেন।
মামলাজট নিরসন : শপথের বার্ষিকীতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মামলাজট নিরসনকল্পে বিদ্যমান অবকাশকালীন ছুটি কমিয়ে আনা এবং যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তিকৃত মামলার রায় লেখা নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা সত্ত্বেও সহকর্মী সকল বিচারপতিকে এ বিষয়ে সম্মত করতে সমর্থ হইনি, এটা আমার ব্যর্থতা। কোনো কোনো বিচারপতি রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন, যা সংবিধান পরিপন্থী।’
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার পর মামলাজট নিরসন এবং মামলা-মোকদ্দমা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আইনি জটিলতা প্রসঙ্গে : বাণীতে প্রধান বিচারপতি কোনো জটিলতা দেখা দিলে আইনজীবীরা যাতে আদালত বর্জন না করেন এবং সমস্যাটি জানান, সে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সমস্যা জানালে দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গণমাধ্যমের দায়িত্ব : এস কে সিনহা বলেন, রাষ্ট্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হলো গণমাধ্যম। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীকে সচেতন করার দায়িত্বটি গণমাধ্যম পালন করে যাবে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহার : মামলা ব্যবস্থাপনায় সংস্কার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অনলাইনে কজলিস্ট প্রকাশ হয়। অনলাইনে উচ্চ আদালত কর্তৃক দেওয়া জামিন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট অনলাইন বুলেটিন আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ রায় তুলে ধরছে।
মামলা নিষ্পত্তি : বাণীতে গত এক বছরে মামলা নিষ্পত্তির হার তুলে প্রধান বিচারপতি বলেন, এক বছরের পদক্ষেপে নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার তুলনামূলক বেড়েছে।
এস কে সিনহা বলেন, ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা ছিল নয় হাজার ৩৫৬টি, যা আগের বছরে ছিল পাঁচ হাজার ৭৮৯টি। অর্থাৎ এ সময়ে আদালতে মামলা নিষ্পত্তি ১৬২ শতাংশ বেড়েছে।
হাইকোর্ট বিভাগে ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৮০টি। ২০১৪ সালে নিষ্পত্তি হয় ২২ হাজার ৪৭৭টি। এ ক্ষেত্রে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ১৪৯ শতাংশ।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১৪ সালের এ সময়ে নিষ্পত্তির সংখ্যা ছিল নয় লাখ ৯৭ হাজার ৬৫২টি। এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক মামলা নিষ্পত্তির হার ১০৭ শতাংশ।