সাক্ষাৎকার
জামায়াত নিষিদ্ধ নয়, বিচারের জন্য আইন সংশোধন হচ্ছে
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। এর আগে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী ছিলেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, বিডিআর হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এনটিভি অনলাইনের মুখোমুখি হন আনিসুল হক। জামায়াতের বিচার, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি বন্ধে আইন ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এম এ নোমান।
এনটিভি অনলাইন : মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি ঠেকাতে নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন।
আইনমন্ত্রী : মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতেই আজকের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন আইনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। মহান মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমেই আমরা একটি স্বাধীন দেশ ও নিজস্ব পতাকা পেয়েছি। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেউ ইচ্ছে মতো কটাক্ষ করুক, তা মেনে নেওয়া যায় না। মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা রক্ষায় একটি নতুন আইন করার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে দাবিও উঠেছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই একটি নতুন আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : মুক্তিযুদ্ধ একটি সার্বজনীন বিষয়, আইন করে এর মর্যাদা রক্ষা করা যাবে কি?
আইনমন্ত্রী : আজকের দিনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও বিকৃত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। নতুন আইন হলে এগুলো রোধ করা সম্ভব হবে।
এনটিভি অনলাইন : নতুন আইনে কী ধরনের বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকছে?
আইনমন্ত্রী : আইনের খসড়া তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান অন্যান্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই আইনের শাস্তির বিধান করা হবে।
এনটিভি অনলাইন : রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে আসছেন, এর প্রকৃত অবস্থা কি?
আইনমন্ত্রী : রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছি না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছেন। কেননা বিদ্যমান আইসিটি অ্যাক্টে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কোনো ব্যক্তির বিচারের বিধান রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের বিচারের বিধান বিদ্যমান আইনে নেই। আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের বিচারের এখতিয়ার পাবে। আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন। আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন হলে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করবে। ট্রাইব্যুনালই সিদ্ধান্ত দেবেন জামায়াতের ভবিষ্যৎ কী হবে। ট্রাইব্যুনাল যে রায়ই দেবেন, সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের নির্দেশনা অনুযায়ী আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছি।
এনটিভি অনলাইন : কবে নাগাদ আইন মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন হতে পারে?
আইনমন্ত্রী : আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই এটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হলেই এটি জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
এনটিভি অনলাইন : অবসরে যাওয়ার পর ব্চিারপতিদের রায় লেখা সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটা বেআইনি ও অসংবিধানিক। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
আইনমন্ত্রী : প্রধান বিচারপতি সাবেক বিচারপতির রায় লেখা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমি শুনেছি। অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী নয়। এটা আইনসম্মত।
সংবিধানের কোথাও উল্লেখ নেই যে, অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন না।
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের রুলসে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের রায় লেখা নিয়ে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। এমনকি আচরণবিধিতেও অবসরপ্রাপ্ত কেউ রায় লিখতে পারবেন না, এ কথাটি কোথাও লেখা নেই। এখন যদি অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখার বিষয়টি বাতিল করা হয়, তবে রুলস সংশোধন করতে হবে, অথবা প্রধান বিচারপতি আদালতে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন এবং তখন অতীত নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।
এনটিভি অনলাইন : প্রধান বিচারপতি হঠাৎ করে কেন এ ধরনের বক্তব্য দিলেন?
আইনমন্ত্রী : আমাদের আসলে একটা অনুশীলন হয়ে গেছে যে রায় ঘোষণার পর বিচারপতিরা রায় লিখতে দেরি করেন। সে ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থীরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই হয়তো তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।
এনটিভি অনলাইন : বিএনপির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল চেয়ে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে...
আইনমন্ত্রী : অবসরে যাওয়ার পর প্রধান বিচারপতিদের রায় লেখা নিয়ে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সূত্র ধরে বিএনপি ও তাদের সমর্থক সংগঠনগুলো অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বিএনপি শুরু থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে মন্তব্য করে আসছে। এখন তারা প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের বক্তব্যের পর যা বলছে এবং করছে তা তাদের আগের কথাগুলোরই রেশমাত্র।