বিচারপতি মানিকের পাশে কেউ নেই
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের পাশে এখন কেউ নেই। তাঁর কারণে বিচার অঙ্গনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে একমত পোষণ করেছেন সরকার ও বিরোধীপক্ষের আইনজীবীরা।
গতকাল রোববার বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাঁর রায় জমা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি যেসব রায় ও আদেশ লেখা শেষ করেছেন, সেগুলো জমা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি সেগুলো গ্রহণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।
এর পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে গণমাধ্যমে কথা না বলে তাঁর কাছে থাকা মামলার নথিগুলো দ্রুত ফেরত দিতে বলেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিচার চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলন করাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি আশা করেন, বর্তমান ও ভবিষ্যতে বিচারপতিরা কোর্টের পবিত্রতা ও মর্যাদা বজায় রাখতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবেন।’
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সরকারবিরোধী আইনজীবীরাও বিচারপতি মানিকের সমালোচনা করছেন।
আজ সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত অঙ্গনে একজন বিচারপতির সংবাদ সম্মেলন নজিরবিহীন। বিশ্বে এ ধরনের কোনো নজির নেই। তাঁর (বিচারপতির শামসুদ্দিন চৌধুরীর ) এ ধরনের আচরণে বিচার অঙ্গনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আশা করি, তিনি এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবেন।’
একইভাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর আচরণ বিচারকসুলভ নয়। তিনি বিচার অঙ্গনকে বিতর্কিত করে চলেছেন। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে একজন বিচারপতি আদালত অঙ্গনে সংবাদ সম্মেলনের কোনো নজির নেই। তিনি একদিকে রাজনৈতিক মিছিল সমাবেশ করছেন, টকশো করছেন, আবার রায় লিখলেন যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আশা করি, প্রধান বিচারপতি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
একই সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর কারণে সুপ্রিম কোর্টের এম ইউ আহমেদ নামে একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন। তিনি বিচারক সেজে রাজনৈতিক রায় দিয়ে গেছেন হাইকোর্টে। আমরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে তাঁকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া থেকে বিরত থেকেছি।’
গত সেপ্টেম্বরে অবসরে যাওয়ার আগে পেনশন আটকে দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী একাধিকবার প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন। আর অবসরে যাওয়ার পরপরই তিনি প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন।