বাংলাবান্ধা দিয়ে মানুষ পারাপার শুরু
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার (ইমিগ্রেশন) চালু পঞ্চগড়ের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল। আজ সেই বহুল প্রত্যাশিত দাবি পূরণ হয়েছে। এই স্থলবন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ড. বিজয় কুমার সিং যৌথভাবে মানুষ পারাপার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দুই দেশের মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ফলক উন্মোচন ও ফিতা কাটার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার কার্যক্রম শুরু করেন।
পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আশরাফুল আলম পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ৩২ জনের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভ্রমণের জন্য ভারতে যান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালুর ফলে ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক জোরদার হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তনসহ পর্যটনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় বিকাশ ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগ্য নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্কের যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত সরকার আমাদের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল তাই আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আজকের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালুর বিষয়টি ইতিহাস হয়ে থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় হবে। তিনি আরো বলেন, দুই দেশের দুই নেতার সুসম্পর্কের কারণে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। ছিটবাসীরা আজকে একটি দেশ পেয়েছেন। তাঁরা প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিচ্ছেন,তাঁরা প্রাণ খুলে হাসছেন।’ শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন উভয় দেশের সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ড. বিজয় কুমার সিং বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, তাই বাংলাদেশের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা রয়েছে। এ বন্দর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মৈত্রী,বাণিজ্য,পর্যটন,শিক্ষা-সংস্কৃতি চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে উভয় দেশই লাভবান হবে। দুই দেশের দুই নেতা একজন আরেকজনের ওপর আস্থাশীল। দুই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।’
এর আগে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল হেলিকপ্টার যোগে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নে এসে অবতরণ করেন। সেখান থেকে সড়ক পথে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসেন। বিকেল ৩টার পর ভারতীয় প্রতিনিধিদল ভারতের ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন,পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু হাকিম মোহাম্মদ নওশাদ, পুলিশ সুপার মো. গিয়াসউদ্দিন আহমদ তাদের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে নিয়ে আসেন। এখানে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোয়াজ্জেম আলী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ডেপুটি হাই কমিশনার অভিজিত চট্টোপাধ্যায় তাঁদের স্বাগত জানান। এরপর বাংলাদেশ ও ভারতের মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত হন।
জনসভা শেষে উভয় দেশের মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা স্থলবন্দর সংলগ্ন বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন ভবনের ফলক উন্মোচন এবং ফিতা কেটে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন ভবনের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খাঁন,পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, ভারতের দার্জিলিংয়ের সংসদ সদস্য সুরিন্দর সিং আলু আলিয়া,পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার ফিরহাদ হাকিম ও ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট মিনিস্টার গৌতম দেব বক্তব্য দেন। এ সময় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক মাসুদ রেজওয়ান পিএসসি, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে মানুষ পারাপার কার্যক্রম চালুর খবর পেয়ে বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার মানুষ স্থলবন্দর এলাকায় ভিড় করেন। এ সময় জনগণকে সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়।