মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল থাকবে : রাষ্ট্রপক্ষ
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘আমি আশা করি, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হবে।’
আজ বুধবার মীর কাসেমের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ কথা বলেন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭১ সালে ডালিম হোটেলে নিহত জসিম, টুন্টু সেন ও রঞ্জিত দাসকে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়ার অপরাধে আদালত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে যে রায় দিয়েছেন, তা বহাল রাখার জন্য আর্জি করেছি।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য সমাপ্ত করেছি। দুটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। এটা সঠিক ছিল। একাত্তর সালে জসিম, টুন্টু সেন ও রঞ্জিত দাসকে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়ার হয়েছিল। ডালিম হোটেলে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেনি আসামিপক্ষ।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরো বলেন, সাক্ষীতে কাসেম আলীর বোন উল্টো বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মীর কাসেম আলী কুমিল্লায় ছিলেন। এখানে ঘটনাস্থলে তাঁর না থাকা নিয়ে নানা রকম বক্তব্য দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে হত্যার দায় মীর কাসেম আলী এড়াতে পারে না।
এ মামলার চূড়ান্ত রায়ের জন্য আগামী ৮ মার্চ দিন রাখেন আদালত। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি হলো সপ্তম মামলা।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে আপিল করেন জয়নুল আবেদীন তুহিন। মীর কাসেমের পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন আনা মোট ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। এগুলো হলো ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে দুটিতে (১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ) মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারটি অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়। ১১ ও ১২ নম্বর ছাড়া বাকি ১২টি অভিযোগই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে।
প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৩, ৪,৬,৭,৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সাত বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই আটটি অভিযোগে তাঁকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেওয়া হয়।