ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটিতে ২৮ এপ্রিল ভোট
ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে আগামী ২৮ এপ্রিল। আজ বুধবার দুপুরে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নির্বাচনের এ তফসিল ঘোষণা করেন।
সিইসি জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আগ্রহীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ ও ২ এপ্রিল। প্রার্থীরা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। এরপর মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ১০ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।
একই সঙ্গে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সব ধরনের ব্যানার, বিলবোর্ড নির্বাচনী এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি। নির্দেশ পালন না করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
সিইসি জানান, জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মীর সারোয়ার মোরশেদ। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।
সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল। ২০০৭ সালে তার মেয়াদ পূর্ণ হয়। এরপর সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েকবার নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়। এরপর দীর্ঘ সাত বছর সীমানা ও আইনি জটিলতার কারণে ডিসিসি নির্বাচন আটকে ছিল। এর মধ্যে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা সিটিকে দুই ভাগ করে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার। পরের বছর ২৪ মে ভোটের তারিখ রেখে কাজী রকিবের কমিশন একবার তফসিলও ঘোষণা করে। কিন্তু সীমানা জটিলতা নিয়ে আদালতের আদেশে তা স্থগিত হয়ে যায়।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগ ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার বিষয়ে কমিশনকে অনুরোধ জানায়। সর্বশেষ সীমানা নির্ধারণের গেজেট ইসিতে পৌঁছালে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ ২০১২ সালের স্থগিত তফসিল বাতিল ঘোষণা করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১০ সালের ১৭ জুন। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেখানে ভোটের আয়োজন হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটের দিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুই মহানগরে সাধারণ ছুটি থাকবে বলে কমিশন জানিয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৬টি সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। এতে ভোটার আছেন ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। আর দক্ষিণে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটারসংখ্যা ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ১৮ লাখ ২২ হাজার ৮৯২ জন ভোটার আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজ, নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এবার উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা প্রকাশ করে সিইসি তিন সিটির ৬১ লাখ ভোটারকে নিঃসংকোচে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল সিটি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী সমর্থন চূড়ান্ত করলেও বিএনপি বা তাদের শরিকরা এখনো কিছু জানায়নি। এর আগে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিল।