লেখাপড়ার কারণে খুন, মানসিক অসুস্থতা : বিশেষজ্ঞ মত
কেবল লেখাপড়ার দুশ্চিন্তার কারণে দুই সন্তানকে তাদের মা মাহফুজা জেসমিন হত্যা করে থাকলে সেটা তার মানসিক অসুস্থতা বলে জানিয়েছেন মনোচিকিৎসকরা।
এদিকে, আজ সোমবার দুই শিশু হত্যার মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, রিমান্ডের তিন দিন পার হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বনশ্রীর দুই সন্তান হত্যার ব্যাপারে তাদের মা মাহফুজা জেসমিন আগের অবস্থানেই আছেন।
স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাহফুজা জেসমিন সত্যি যদি নুসরাত আমান অরণী ও আলভী আমানকে খুন করে থাকেন, তবে ওই ঘটনা ঘটানোর আগে তাঁর আচরণ কেমন ছিল তার একটি ধারণা পাওয়া যায় ওই সময় বাসায় উপস্থিত গৃহশিক্ষিকার কাছ থেকে।
গৃহশিক্ষিকা শিউলী আকতার বলেন, ‘সেদিন ম্যারিজ ডে ছিল ওর মার। এ জন্য পড়া কমপ্লিট করতে পারে নাই। ওর আম্মু আমাকে বলতেছেন যে, মিস, ও তো পড়া কমপ্লিট করতে পারে নাই, ওকে বকা দিয়েন না। আমি বলেছি, আচ্ছা ঠিক আছে। মেয়েটা ভালো ছিল। মেধাবী ছিল।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পড়া না শেখার কারণে তাঁর সন্তানদের গৃহশিক্ষিকা বকা দিতে পারেন এবং এতটুকুই যে মা সহ্য করতে পারেন না, তিনি আবার গৃহশিক্ষিকা চলে যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সন্তানদের পড়ালেখার দুশ্চিন্তায় তাদের হত্যা করে ফেললেন, বিষয়টি মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। একইভাবে বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না স্কুলশিক্ষকরাও।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন বলেছেন, ‘পড়ালেখার বাইরে সে অনেক ছবি আঁকত। ছবিগুলোর মধ্যে দেখলাম, তার চিন্তা-ধারণা তাতে প্রকাশ পেয়েছে। সে খুব ক্রিয়েটিভ ছিল।’ এ স্কুলেই পড়ত অরণী।
মনোচিকিৎসক ড. মোহিত কামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কেবল পড়ালেখার দুশ্চিন্তার কারণে যদি সন্তানদের হত্যা করে থাকেন মাহফুজা জেসমিন, তাহলে বিষয়টিকে তারা কীভাবে দেখছেন। তিনি বলেন, শুধু লেখাপড়ার দুশ্চিন্তার জন্য কোনো মা হত্যা করতে পারেন না। যদি করে থাকেন, এখানে অন্য প্যাথলজি তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্য কোনো প্যাথলজি আছে, যেটাকে আমরা সাইকোপ্যাথলজি বলি। যেটা বাইরে থেকে আপনারা যাকে সুস্থ ভাবছেন, কিন্তু চিন্তার মধ্যে তার জট থাকতে পারে। আপনি মেন্টাল হাসপাতালে যাবেন, কথা বলে দেখবেন যে, সব রোগী ভালো।’
জানা গেছে, তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে মনোচিকিৎসকদের সহায়তা নিচ্ছেন। তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, যদি মানসিক অসুস্থতা না থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই এই খুনের সঙ্গে পড়ালেখার দুশ্চিন্তা নয়, অন্য কোনো বিষয় জড়িত আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘যদি বাবা কিংবা মা মানসিকভাবে সুস্থ না হন কিংবা তিনি যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন কিংবা পারিবারিক আবহ খুব ভালো না হয় অথবা অস্বাভাবিক কোনো কিছু ঘটে গিয়ে থাকে, সে রকম ক্ষেত্রে এ রকম হতে পারে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মাহফুজা জেসমিন এখন পর্যন্ত খুনের ব্যাপারে ভিন্ন কোনো তথ্য তো দেননি, বরং ঘটনার জন্য তিনি অনুতপ্ত এমন আভাসও তাঁর কাছ থেকে পুলিশ পায়নি বলে জানা গেছে।
গত ৩ মার্চ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিজের দুই সন্তান নুসরাত আমান অরণী ও আলভী আমানকে হত্যা করেন মা মাহফুজা মালেক ওরফে জেসমিন। তবে সন্তানরা অসুস্থ, এমন কথা বলে তাদের হাসপাতালে পাঠান জেসমিন। ময়নাতদন্তের আগেই দ্রুত স্বামীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি জামালপুরে চলে যান মাহফুজা। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দুই শিশুকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে জানানোর পর জামালপুর থেকে মাহফুজাকে আটক করে র্যাব। পরে দুই শিশুর বাবা আমানুল্লাহর মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।