৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনের যাবজ্জীবন
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিশু রিয়াদুল ইসলাম মিরাজকে অপহরণ করে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার বিকেলে পাঁচ আসামির উপস্থিতিতে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রব হাওলাদার এই রায় দেন।
এদিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের শাহজালাল হত্যা মামলায় নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ, প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জহিরুল কবীর এই রায় দেন।
শিশু মিরাজ হত্যা মামলার বিবরণে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানি গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে ১৩ বছরের মিরাজ উপজেলার বিএম হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর বিকেলে মিরাজ স্থানীয় স্কুল মাঠে নিজের বাইসাইকেল চালাচ্ছিল। সে মাহাবুবের চাতালের পাশে গেলে আসামিরা কৌশলে তাকে অপহরণ করে। বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরের দিন দুপুর ৩টার দিকে মিরাজের বাবার কাছে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এরপর ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় যশোর সদর উপজেলার নারাঙ্গালী এলাকার বিল সংলগ্ন খালের পাড় থেকে মিরাজের সাইকেল ও পাশের ঝোপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি পাবলিক প্রসিকিউটর এনামুল হক জানান, মিরাজের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা ১২ জনকে আসামি করে ঝিকরগাছা থানায় মামলা করেন। আসামিদের তিনজন কিশোর হওয়ায় তাদের যশোর কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। প্রথমে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ পরে গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে তিন কিশোরকে বাদ দিয়ে বাকি নয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ওই তিন কিশোরের বিরুদ্ধে পৃথক আদালতে মামলা চলছে।
খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রব হাওলাদার উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আজ বিকেলে রায় দেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া পাঁচ আসামি হলো জাহিদ হাসান মিলন, মো. রুবেল, মো. সোহাগ, মহসিন রেজা শহিদ ও মামুন চৌধুরী মুকুল। যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলো রাশিদা বেগম জানকি, ইকবাল হোসেন, আবুল কাশেম কাসু ও হজরত আলী।
আজ রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া মামুন চৌধুরী মুকুল ও মহসিন রেজা শহিদ এবং যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের মধ্যে আবুল কাশেম কাসু ও হজরত আলী পলাতক ছিলেন। বাকি পাঁচ আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এনামুল হক। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন, অচিন্ত্য কুমার ও মুহাসিন আলী।
ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ আদালত সংশ্লিষ্ট-সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৮ মার্চ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার হাটিরচর নওপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় শাহজালাল খুন হন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নূরজাহান বাদী হয়ে ২৫ জনকে আসামি করে ঈশ্বরগঞ্জ থানা মামলা করেন। মামলা চলাকালে দুই আসামির মৃত্যু ঘটে।
দীর্ঘ শুনানি শেষে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জহিরুল কবীর ২৩ আসামির মধ্যে নয়জনকে যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেন। অন্যদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাঁদের খালাস দেন।
দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন আকরাম হোসেন, গিয়াসউদ্দিন, এমদাদুল, এরশাদুল, সাইদুল, বাচ্চু মিয়া, ইদ্রিস আলী, জুয়েল ও হেলাল উদ্দিন। রায় ঘোষণার সময় শুধু গিয়াসউদ্দিন, এমদাদুল ও এরশাদুল উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক আছেন।
রায় ঘোষণা শেষে তিন আসামিকে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।