টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আগামী ৩ মে কাদের সিদ্দিকীর করা আপিলের শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ কাদের সিদ্দিকীর লিভ টু আপিল গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান।
এর আগে গতকাল লিভ টু আপিল গ্রহণ করা হবে কি না এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য রাখেন আদালত। তবে নির্বাচন কতদিন পর্যন্ত স্থগিত থাকবে সে বিষয়ে কোনো দিন নির্ধারণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী ড. মো. ইয়াসিন খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, শুনানিতে কাদের সিদ্দিকীর আপিল কোন যুক্তিতে মঞ্জুর করা হবে তা জানতে চেয়েছিলেন আদালত। কিন্তু তাঁরা কোনো যুক্তি আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। কাদের সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লিখিতভাবে আপিলের শুনানির সময় যুক্তি উপস্থাপন করবেন তাঁরা।
অন্যদিকে কাদের সিদ্দিকীর আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, ‘আদালত লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন। এখন লিখিতভাবে আমরা বাড়তি যুক্তি উপস্থাপন করব।’
গত ৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপনির্বাচনে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। কাদের সিদ্দিকীর করা এক রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। একই সঙ্গে রিটের নিষ্পত্তি করা হয়।
রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর এর বিরুদ্ধে আপিল করেন কাদের সিদ্দিকী। সেই আপিল গ্রহণ করা হবে কি না তা নিয়ে শুনানি শেষে আজ নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিলেন আদালত।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ৩ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। এরপর গত বছরের ১০ নভেম্বর টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপনির্বাচনের দিন ধার্য করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
অন্য দলের পাশাপাশি এতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে কাদের সিদ্দিকী ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ঋণ খেলাপের অভিযোগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন।
কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিলের কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থার নামে অগ্রণী ব্যাংকে ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। কাদের সিদ্দিকী এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও নাসরিন কাদের সিদ্দিকী পরিচালক। ঋণখেলাপি হওয়ায় তাঁদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
এরপর ১৬ অক্টোবর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী।
১৮ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন কাদের সিদ্দিকীর আপিল খারিজ করে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। এরপর নির্বাচন কমিশনের বাতিল আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কাদের সিদ্দিকী।
রিট আবেদনে বলা হয়, ঋণখেলাপির অভিযোগে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা অবৈধ। কেননা, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুনঃতফসিল করায় কাদের সিদ্দিকী ঋণখেলাপির অন্তর্ভুক্ত হননি।
পরে ২৬ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন জানান ইসির অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড ব্যারিস্টার ড. মো. ইয়াছিন খান। পরদিন ২৭ অক্টোবর আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করে দেন।
একই সঙ্গে ইসির আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়ে ২ নভেম্বর এর শুনানির দিন ধার্য করে দেন। ২ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতির দেওয়া উপনির্বাচনের ওই স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত উপনির্বাচন স্থগিত রেখে এর মধ্যে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চে নিষ্পত্তির আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। কয়েক কার্যদিবস এ বিষয়ে শুনানি শেষে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট।