রায় শুনলেন নিজামী, ছিলেন ‘স্বাভাবিক’
আপিল বিভাগে বহাল রাখা রায় পড়ে শোনানো হলো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে। এ সময় তিনি স্বাভাবিক ছিলেন বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লাল কাপড়ে ঢাকা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কাশিমপুর পার্ট ২-এ পাঠানো হয়। এর পর পরই তাঁকে রায় পড়ে শোনানো শুরু হয়। বেলা ১১টার কিছু আগে রায় শোনানো শেষ হয়।
কাশিমপুর পার্ট ২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার জানান, রায় পড়ে শোনানোর সময় তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবেন বলে ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি খুব স্বাভাবিক ছিলেন বলেও জানান জেল সুপার।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। এর পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এর আগে বিকেল ৪টার দিকে ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জামায়াত নেতা। পরে আপিলের রায়েও তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে আটটি, অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
এগুলোর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে আপিল বিভাগ করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের (৪ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে খালাস দেন। বাকি তিনটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
পাশাপাশি পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্রের (৩ নম্বর অভিযোগ) দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগ এ দুটি অভিযোগ থেকেও তাঁকে খালাস দিয়েছিলেন।
তবে আপিল বিভাগ বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন।
এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়। আর গত বছরের ১১ এপ্রিল জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ২১ নভেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তবে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া গত ৮ মার্চ জামায়াতের আরেক নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।