রিভিউ আবেদনের সম্মতি দিয়েছেন নিজামী
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামী রিভিউ আবেদনের (রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন) সম্মতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ।
আজ বুধবার দুপুরে নিজামীর আইনজীবীরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে সকালে তাঁর দুই আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম ও ছেলে ব্যারিস্টার রাজীব মোমেন কাশিমপুর কারাগারে যান।
মতিউর রহমান বলেন, ‘নিজামী আমাদের বলেছেন- সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসত্যের ওপর ভিত্তি করে যে রায়, এই রায়েল বিরুদ্ধে অবশ্যই রিভিউ দায়ের করতে হবে। তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ় ও ভালো আছেন, যেহেতু তাঁর বয়স ৭৫ বছর সুতরাং শারীরিকভাবে তিনি একটু দুর্বল।’
নিজামীর এ আইনজীবী আরো বলেন, ‘পাবনার যে দুটো ঘটনায় জড়িয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে, এ দুটো এলাকায় তিনি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের আগে কোনোদিনই যাননি। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশে এ মামলা করা হয়েছে এবং সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
রিভিউ আবেদনে নিজামী ন্যায়বিচার পাবেন এবং বেকসুর খালাস পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বলে জানান নিজামীর আইনজীবীরা।
এক প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান আকন্দ জানান, যেহেতু আজকে তিনি রায় লিখিতভাবে পেয়েছেন, তাই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ দাখিল করা হবে।
এর আাগে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় নিজামির মৃত্যু পরোয়ানা ও রায়ের কপি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তা নিজামীকে পড়ে শোনানো হয়।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-২ এর ৪০ নং কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী।
গত মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারকরা সই করার পর সন্ধ্যায় মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর রাতে ওই পরোয়ানা পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। নিয়ম অনুযায়ী রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। আর এ দণ্ড কার্যকরের আগে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ পাবেন নিজামী। রিভিউ না টিকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও তিনি চাইতে পারবেন।
তার দুই আবেদন নাকচ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। তার আগে আসামির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন পরিবারের সদস্যরা।
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জামায়াত নেতা। পরে আপিলের রায়েও তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে আটটি, অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
এগুলোর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে আপিল বিভাগ করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের (৪ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে খালাস দেন। বাকি তিনটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।