নিয়ম ভেঙে আ. লীগ নেতাকে জমি ইজারা দিল রাসিক
এবার নিয়ম-নীতি ভেঙে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে জমি ইজারা দিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। গত বুধবার কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমনের নামে এই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
লিমন সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) ছিলেন। এর আগে গেল পাঁচ বছর ধরে ওই জমি ইজারা নিয়ে ব্যবহার করে আসছে এসএ পরিবহন। কিন্তু ওই ইজারা বাতিল না করেই আওয়ামী লীগ নেতা লিমনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশনের ১৩তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্তক্রমে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রামপুরা মৌজার ৫ নম্বর খতিয়ানে ৬০২ নম্বর দাগের ৭৪৪ দশমিক ৭৯ বর্গফুট জমি (সাহেববাজার-আলুপট্টি সড়কসংলগ্ন) মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে এসএ পরিবহনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর পর থেকেই নিয়ম অনুয়ায়ী ভাড়া পরিশোধ এবং ইজারা নবায়ন করে জায়গাটি এসএ পরিবহনের কুরিয়ার ও পার্সেলের গাড়ি যাতায়াতের একমাত্র পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ইজারার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদনও করে এসএ পরিবহন। কিন্তু এরই মধ্যে কোনো নোটিশ ছাড়াই গত বুধবার আওয়ামী লীগ নেতা লিমনকে ওই জমি বরাদ্দ দিয়ে চিঠি দেন সিটি করপোরেশনের সচিব সৈয়দা জেবিননিছা সুলতানা।
সচিবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনার (মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন) ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অত্র করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন রামপুরা মৌজার ৫ নম্বর খতিয়ানে ৬০২ নম্বর দাগের ৭৪৪ দশমিক ৭৯ জায়গা/জমি প্রতি বর্গফুট ১৪ টাকা হিসেবে এক লাখ ২৫ হাজার ১২৫ টাকায় শর্তসাপেক্ষে এক বছর মেয়াদে জায়গাটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলো।’ গত ১৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে পুরো টাকা লিমন পরিশোধ করেছেন বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই চিঠিতে।
এদিকে, সিটি করপোরেশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এসএ পরিবহন কার্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র পথ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারাই ইজারা পেয়েছিল ওই জমি। অকৃষি খাত জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী জায়গাটি তারাই বরাদ্দ পেয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কা না করেই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার নির্দেশে সিটি করপোরেশন লিমনকে নতুন করে ইজারা দিয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, এসএ পরিবহনের নামে বরাদ্দ বাতিল করে নতুন কারো নামে ওই জমি ইজারা দিতে হলে আগে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় তা অনুমোদন করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এটি নিয়মের লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে এসএ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ওই জমিসংলগ্ন আমাদের নিজস্ব জমিতে অফিস রয়েছে। সড়কে যাতায়াত করতে হলে সিটি করপোরেশনের ওই জায়গা ব্যবহার করা ছাড়া ভিন্ন কোনো রাস্তা নেই। কাজেই নিয়ম অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই এত বছর ধরে ইজারা নিয়ে জায়গাটি এসএ পরিরহন ব্যবহার করে আসছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ইজারার মেয়াদ বাড়াতে হয়। সে হিসেবে আমরা চলতি বছরের শুরুতেই মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনও করেছি। কিন্তু তার কোনো জবাব এখনো আমাদের দেওয়া হয়নি। উল্টো কোনো নোটিশ ছাড়াই অন্য ব্যক্তিকে জমি বরাদ্দ দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এটি সুস্পষ্টভাবে নীতিমালাবিরোধী। তা ছাড়া অন্যজনকে ইজারা দেওয়ায় জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের আর কোনো রাস্তা থাকবে না।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম জন জানান, তিনি সম্পত্তি কর্মকর্তা হলেও জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে তাঁর কোনো হাত নেই। বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সচিব ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা জেবিননিছা সুলতানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে জমি বরাদ্দ পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতার মামা ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার টেকন জানান, আওয়ামী লীগ নেতা লিমনের নামে ওই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে কীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হলো তা তিনি জানেন না।