আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, বললেন মাশরাফি
‘কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছি, এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন এবং গর্বের। আর সেমিফাইনালে খেলতে না পারাটা বেদনার। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। দলের সব খেলোয়াড় তাদের শতভাগ দিয়েছে।’ দেশের মাটিতে পা দিয়ে অনেকটা জবাবদিহিতাই করলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
বাঘ বাহিনীর প্রধান বললেন আত্মবিশ্বাসের কথাও, ‘এই হার থেকেও আমরা পেয়েছি অনেক কিছু। সামনে আমাদের হোম সিরিজগুলোতে এই অভিজ্ঞতা, আত্মবিশ্বাস কাজে আসবে। সামনেই পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের সাথে আমাদের সিরিজ আছে। বিশ্বকাপ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস আমাদের অনেক এগিয়ে রাখবে।’
স্বপ্নপূরণ করে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। নিজেদের হয়তো আরো উঁচুতেও নিয়ে যেতে পারত মাশরাফি বাহিনী। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে শেষ আটের লড়াইয়ে দুর্ভাগ্য আর ‘বিতর্কিত’ আম্পায়ারিংয়ের কারণে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তাতে অবশ্য খেদ নেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকরা দেশে ফিরলেন বীরের বেশেই। বিমানবন্দরে নেমেই পেলেন ফুলেল সংবর্ধনা।
অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলার বাঘদের নিয়ে আসা বিমানের অবতরণের কথা ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। তবে কিছুটা বিলম্ব করে সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন মাশরাফিরা। তাঁদের বরণ করে নেওয়ার জন্য সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার ভক্ত-সমর্থক।
পরে বিমানবন্দরে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের এই সাফল্য বাংলাদেশের সব মানুষের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আর ক্রিকেটাররাও নিজেদের সর্বোচ্চ উজাড় করে খেলার চেষ্টা করেছে। এটা ছিল পুরো একটি দলগত প্রচেষ্টা।’ এ সময় ভালো খেলার জন্য দলের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রশ্ন আসে, এই টুর্নামেন্টে আপনি অধিনায়ক হিসেবে ম্যান অব দ্য টুনার্মেন্ট দেবেন কাকে? মাশরাফি দ্বিধা না করেই বলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমের নাম।
ভারতের সঙ্গে খেলায় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বাংলাদেশের দলনেতা বললেন, ‘হেরে খারাপ লেগেছে, এটা সত্যি। ওই সময় উইকেটগুলো পেলে আমাদের জয়ের সুযোগ ছিল।’
মাশরাফি আশা প্রকাশ করেন, গত জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর থেকে বাংলাদেশ দল যে ভালো খেলা উপহার দিচ্ছে তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তবে দলের ভালো পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপরই গুরুত্ব দিলেন তিনি।
টাইগারদের বরণে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন ক্রিয়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেল এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদপ্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক। ছিলেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসও।
এ ছাড়া কয়েক হাজার ক্রিকেটপ্রেমীর স্লোগান-উৎসবে মুখরিত ছিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা। বিকেল ৫টা থেকে ক্রিকেট সমর্থকরা ওই এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করেন। ক্রিকেটাররা বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ওই স্লোগান পরিণত হয় প্রায় হাজার ত্রিশেক বাঘের গর্জনে।
বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বাড়ি পৌঁছে দিতে ছিল পুলিশি প্রহরা। নিরাপত্তার জন্য পুলিশের বিশেষ বাহিনী ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) ক্রিকেটারদের দিয়েছে ‘ভেরি ভেরি স্পেশাল পার্সনের’ সেবা।
অবশ্য এই দলের সঙ্গে না এসে একদিন আগে ঢাকায় ফিরেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সস্ত্রীক তিনি ফিরেছেন শনিবার রাতে। বিগ ব্যাশে খেলার জন্য সাকিব বাংলাদেশ দলের আগেই অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিলেন। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের টিকিটটা কাটা ছিল তখনই। কাঁধে অস্ত্রোপচার করানো এনামুল হক ফিরেছেন একই দিন বিকেলে।
বিদেশি কোচিং স্টাফরা চলে গেছেন ছুটিতে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়েন থেকে গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। দুবাই পর্যন্ত দলের সঙ্গে এসে ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল গেছেন ইংল্যান্ডে, বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক গেছেন জিম্বাবুয়েতে এবং সহকারী কোচ রুয়ান কালপাগে শ্রীলঙ্কায় ফিরে যান।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানসহ বিসিবির বেশির ভাগ কর্মকর্তাই এখন অস্ট্রেলিয়ায়। তাঁরা সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ দেখে দেশে ফিরবেন। তাই মাশরাফিদের ঘটা করে কোনো সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি এদিন। পরে বড় আকারে একটা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান।