সরিয়ে দেওয়া হলো রাসিকের বিএনপিপন্থী প্যানেল মেয়রদের
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম এবার বিএনপিপন্থী প্যানেল মেয়রদের অব্যাহতি দিয়ে নিজেই প্যানেল মেয়রদের শীর্ষে আসীন হয়েছেন।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে নগর ভবনের ৩০২ নম্বর কক্ষে কয়েক মিনিটের জন্য বিশেষ সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে এই সভার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপিপন্থী কাউন্সিলররা। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মেয়র নিযাম উল আযীমের দায়িত্ব পালন এবং নির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মন্ত্রণালয়ের সাময়িক বরখাস্তের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলররা নিযামের বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বানের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে বিএনপি-জামায়াতপন্থী ২২ জন কাউন্সিলর আজকের সভা বয়কট করেন। তাঁদের দাবি, উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করলেও সেই রায়কে উপেক্ষা করে নিযাম উল আযীম দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজকের সভায় বিএনপিপন্থী প্যানেল মেয়রদের অব্যাহতি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিযাম উল আযীমের দাবি, ‘প্যানেল মেয়ররা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন।’
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের বিধি-নিষেধের রায় প্রসঙ্গে নিযাম বলেন, ‘আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আমি এখনো হাতে পাইনি। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকেও আমি কোনো নির্দেশনা পাইনি। কাজেই এখনো আমি বৈধভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’
তবে নিযামের পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করে রাসিকের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও এক নম্বর প্যানেল মেয়র মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল আমিন আজব বলেন, ‘প্রকল্প বরাদ্দের জন্য ফাঁকা প্যাডে স্বাক্ষর দিয়ে আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযামকে দিয়েছিলাম। স্বাক্ষর সংবলিত ফাঁকা প্যাড সব কাউন্সিলরই মেয়রকে দিয়ে থাকেন। সেই ফাঁকা প্যাড দেখিয়েই এখন বলা হচ্ছে, আমি পদত্যাগ করেছি। আমার পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না।’
এ বিষয়ে রাসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন বলেও জানান আনোয়ারুল আমিন আজব। একই অভিযোগ করেছেন প্যানেল মেয়র নুরুন নাহার বেগমও।
আজকের বিশেষ সাধারণ সভায় উপস্থিত ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম রাশেদুল হাসান টুলু জানান, সিটি করপোরেশনের পর্ষদে ৪০ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় এই সংখ্যা এখন ৩৯। আজকের বিশেষ সাধারণ সভায় ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি ২২ জন সভায় হাজির হননি।
এ কে এম রাশেদুল হাসান টুলু আরো জানান, সভার প্রথমেই জানানো হয় প্যানেল মেয়র-১ আনোয়ারুল আমিন আজব, প্যানেল মেয়র-২ নুরুজ্জামান টিটো এবং প্যানেল মেয়র-৩ নুরুন নাহার বেগম অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। ফলে তিনটি পদই এখন শূন্য। পরে প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযীম, প্যানেল মেয়র-২ হিসেবে ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম রাশেদুল হাসান টুলু এবং প্যানেল মেয়র-৩ হিসেবে সংরক্ষিত নারী আসনের কউন্সিলর তাহেরা বেগম মিলিকে নির্বাচিত করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাসিকের সচিব সৈয়দা জেবিন নিছা সুলতানা বলেন, নির্বাচিত নতুন পর্ষদ পাঁচ বছরের জন্যই প্যানেল মেয়রদের নির্বাচন করেন। এটিই বিধান। কাজেই মেয়র বুলবুলের পর্ষদের তিন প্যানেল মেয়র পদত্যাগ না করলে নতুন করে ওই পদগুলোতে নির্বাচনের সুযোগ নেই।’
তবে সরিয়ে দেওয়া তিন প্যানেল মেয়রের অভিযোগ হাতে পেয়েছেন বলেও স্বীকার করেন রাসিক সচিব সৈয়দা জেবিন নিছা।
এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে নিযাম উল আযীমের আজকের বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বানকে অবৈধ দাবি করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, নিযাম আদালতের রায়কে ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছেন। এটি অন্যায়। আর প্যানেল মেয়ররাও সাধারণত পাঁচ বছরের জন্যই নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
গত বছরের ৭ মে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে গত ৩ মার্চ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মন্ত্রণালয়ের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। সরকারপক্ষ এ নিয়ে আপিল করলে গত ২৪ মার্চ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
অপর এক মামলায় রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীমকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ।
গত ১৫ মার্চ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল রাজশাহীতে নাশকতার একটি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বুলবুল এখন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।