পরীক্ষার দিন সিটি নির্বাচন, পাল্টাতে হবে সূচি
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের কারণে ২০১৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা পিছিয়েছে অনেকবার। প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর এ পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত তারিখ ছিল ২ ফেব্রুয়ারি। বার বার পিছিয়ে দেওয়ার কারণে দেড় মাসের বেশি সময়েও পরীক্ষা শেষ হয়নি। এর মধ্যেই ১ এপ্রিল শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা।
হরতাল-অবরোধের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে আবার আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্যও পিছিয়ে দিতে হবে এ পরীক্ষা।
গত ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আসছে ২৮ এপ্রিল তিন সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী, ২৮ এপ্রিল সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের দুটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর মধ্যে সকাল ১০টা থেকে মনোবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) প্রথমপত্র এবং দুপুর ২টা থেকে চারু ও কারুকলা (তত্ত্বীয়) প্রথমপত্র পরীক্ষার সময় নির্ধারিত রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২৮ এপ্রিল যদি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়, তাহলে পরীক্ষা দুটি অবশ্যই পিছিয়ে দিতে হবে। এর দু-তিনদিন আগের পরীক্ষাও পেছাতে হবে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চিন্তাভাবনা করেই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই দিনের পরীক্ষার সূচি বদলে ফেলা হবে বলে কমিশনকে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
তবে পরীক্ষা পেছানো বা নতুন তারিখ নির্ধারণের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা আগামী ১ এপ্রিল থেকেই শুরু হবে। এর মধ্যে ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের দিনও পরীক্ষার সূচি নির্ধারিত রয়েছে। যেহেতু সময়সূচির পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেহেতু পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’
এর আগে সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রগুলো গোছানোর জন্য এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচনের আগে কয়েকদিন সময় দরকার কমিশনের।
ঘোষিত সময়সূচিতে ২৬ এপ্রিলেও এইচএসসির পরীক্ষা রয়েছে। এই একদিনের ব্যবধানে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা সম্ভব কি না, তা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেন, ‘সম্ভব হবে বলেই আমরা মনে করি।’
গত ১২ মার্চ সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে কথা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য আমরা গ্যাপ খুঁজছিলাম। সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, হরতাল হলে ওনারা রিস্ক নিচ্ছেন না। হরতাল থাকলে শুক্র-শনিবার পরীক্ষা নিচ্ছেন। তো এ রকম পরিস্থিতি চললে পরে আমরা শুক্র-শনিবার অ্যাভয়েড করব। ওনাদের শুক্র-শনিবার ছেড়ে দেব।’
সিইসি বলেন, ‘আমার অ্যাকচুয়ালি, অলমোস্ট ফোর-ফাইভ ডেজ (দিন) লাগে। পাঁচদিন হলে পরে কমফোর্টেবলি হয়। অবশ্য সব কেন্দ্রে ওনাদের পরীক্ষা হবে না। বড় বড় কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা হয়। আমাদের কেন্দ্র অতটা এফেক্ট করবে না। কিন্তু পরীক্ষা তো হলে পরে আমাদের সমস্যা। সে জন্য আমরা গ্যাপ চেয়েছি। ওনারা বলছেন যে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওনারা এই গ্যাপের ব্যবস্থা করে দেবেন। এমনিতেও তো শিডিউল মোতাবেক ওনারা পরীক্ষা নিতে পারছেন না। ওনাদের চেঞ্জ করতে হচ্ছে। তারা নরমাল পরীক্ষাগুলোর ডেট চেঞ্জ করে শুক্র-শনিবার নিয়ে আসছেন। তো ওনারা বলেছেন, শুক্র-শনিবারটা ওনাদের ছেড়ে দিতে। আমরা সেটা মনে করছি শুক্র-শনিবারে ওনারা পরীক্ষা করুক। বাকি দিনের মধ্যে সুইটেবলি আমরা ম্যাচ করে নেব।’
সিইসি ব্যাখ্যা দেন, ‘আমাদের পাঁচদিন লাগে এই জন্য যে নির্বাচনী কর্মকর্তারাও শিক্ষক। তাদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য আমার কিছুটা সময় লাগে। চারদিন সময় হলে সবচেয়ে ভালো।
ভোটকেন্দ্রটা আগের দুদিন হলে আমাদের সুবিধা। চেয়ার-টেবিল সরানো লাগে। আমাদের কিছুটা প্রিপারেশন লাগে, আমরা তো আগের দিন থেকেই ওখানে মোবিলাইজড করে ফেলি। সেজন্য আমাদের একটু সময় লাগে। সেটা তাদের বলা হয়েছে। তাঁরা এভাবে এক্সারসাইজ করছেন। তাঁরা আমাদের জানাবেন।’
গত ২০ মার্চ রাজধানীর একটি এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সে দিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হতে বাকি আর আটদিন। এতে অংশ নেবে প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করতে লাগবে ৩০ কার্যদিবস। হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকলে, শুধু শুক্র-শনিবারে পরীক্ষা নেওয়া হলে জুলাই মাসের মধ্যেও পরীক্ষা শেষ করা কঠিন হবে।
তফসিল ঘোষণার কারণে এরই মধ্যে তিন সিটি করপোরেশন এলাকায় শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী আমেজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, যেদিন নির্বাচন সেদিনই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষা। অথচ পরীক্ষা দুটি পেছাবে কি না, কিংবা পেছালেও তা কবে নাগাদ নেওয়া হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একদিকে হরতাল-অবরোধ, অন্যদিকে পরীক্ষার দিন নির্বাচন, এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।