বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন নিয়ে রিটের রায় মঙ্গলবার
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কার্যক্রম নিয়ে করা রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার এ বিষয়ে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
দুদিনব্যাপী শুনানি শেষে আজ রোববার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ১৪ মার্চ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রম কেন অবৈধ নয় তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি), মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোসহ ১৩ জনকে জবাব দিতে বলা হয়।
সে অনুযায়ী গত ৩ এপ্রিল শুনানি হয়। দ্বিতীয় দিনের মতো আজ শুনানি শেষে আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।
এর আগে গত ৯ মার্চ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এস এম এনামুল হক নামের এক আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিটের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অনিক আর হক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। মোবাইল অপারেটর রবির পক্ষে ছিলেন ফাতেমা আনোয়ার আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় ও জেসমিন সুলতানা।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট অনিক আর হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা শুনানিতে বলেছি, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০১০-এর ১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র সবাইকে দেওয়ার পর গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক নয়। সরকার যেহেতু স্মার্টকার্ড তৈরি করছে, সেখানে সব তথ্যই থাকবে। তাই ওই স্মার্টকার্ড শেষ হলে সেখানে সবকিছু থাকবে। এ ছাড়া বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এ নিবন্ধনের অপব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এটি বন্ধ করা দরকার।’
অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকার যদি দায়িত্ব নিয়ে এসব কাজ করে, তাহলে এসব তথ্যর অপব্যবহার হলে এর বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সবগুলোই অন্য দেশের। এসব কোম্পানি গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেবে এবং এর অপব্যবহার করা হলে কিছুই করার থাকবে না।’
রিটকারী এস এম এনামুল হক আবেদনে বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর বিটিআরসি জানায়, সব সিম নিবন্ধন, সক্রিয় ও যাচাই করতে আঙুলের ছাপ দিতে হবে। দেশের ছয়টি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটির মালিকানা বিদেশিদের হাতে। দেশের ৯৭ শতাংশ গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে। এসব তথ্য নিয়ে কীভাবে তা ব্যবহার করা হচ্ছে, এটি জানা নেই। তাই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কা থেকে এই রিট আবেদন করা হয়েছে।
গত ১৬ ডিসেম্বর সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ায় আঙুলের ছাপ না দিয়ে এখন আর নতুন সিম কেনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুরোনো সিমের পুনর্নিবন্ধন চলছে, যা এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনার কথা বলে আসছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
ভুয়া পরিচয়ে অথবা নিবন্ধন ছাড়া সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনর্নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর মোবাইল গ্রাহকদের সিমের তথ্য যাচাইয়ে শুরু হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারের প্রক্রিয়া।