রামেকে ইন্টার্নদের কর্মবিরতি, দুই দিনে ৩০ রোগীর মৃত্যু
চিকিৎসককে মারপিটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে তিনদিনের আলটিমেটাম দিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে সাময়িকভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) চিকিৎসকরা। আজ রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে ইন্টার্নরা কাজে যোগ দেন।
এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলাকালে গত শুক্রবার দুপুর থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩০ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। রোগীর মৃত্যুর সংখ্যাকে স্বজনরা অস্বাভাবিক মনে করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে তা স্বাভাবিক।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করার শর্তে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন তারা। দুপুর আড়াইটা থেকে তারা কাজে যোগদান করেছেন।’
রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. আল-আমিন জানান, আজ দুপুরে পরিষদের নেতারা হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে তিনদিনের জন্য কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে এই তিনদিনের মধ্যে তাদের পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হলে আগামী ২১ এপ্রিল থেকে হাসপাতালে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে বলেও জানান তিনি।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের পাঁচ দফা দাবির অন্যতম হলো- চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের আগামী তিনদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা এবং হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলে কর্মরত চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
রামেক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুর থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩০ জন রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে শুক্রবার ১৪ জন, শনিবার ১২ জন ও আজ রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত মারা গেছেন চারজন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রামেক হাসপাতলে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ থেকে চারশ রোগী ভর্তি হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় এক হাজার সাতশ থেকে এক হাজার আটশ রোগী। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে বিপুল রোগীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ির প্রেমতলী এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আতিকুর রহমান জানান, তাঁর ভাগ্নি আয়শা বেগম (২১) পেটের ব্যথা নিয়ে গত তিনদিন আগে প্রেমতলী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রামেক হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
আতিকুর বলেন, ‘ভর্তির পর থেকে আমার ভাগ্নির কোনো চিকিৎসা হয়নি। ডাক্তার ও নার্সদের কেউ আসেননি। তাঁদের নাকি কর্মবিরতি চলছে। তাঁদের কারণে আজ সকালে আমার ভাগ্নিটা মারা গেছে। তারা যদি চিকিৎসা দিতে না পারে, তাহলে আমাদের বলে দিলে আমরা বাইরে নিয়ে যেতাম। প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা চিকিৎসা ছাড়া পড়ে ছিল আমার ভাগ্নি। দেখার কেউ ছিল না। পরে সকালে ঝাড়ুদার এসে অক্সিজেন দিয়ে দেয়। তখন নার্স এসে আইসিইউতে নিয়ে যেতে বলে। সেখানে নিয়ে গেলে ডাক্তার বাইরে এসে মৃত ঘোষণা করেন।’
তবে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির প্রভাবে কোনো রোগী মারা যায়নি বলে দাবি করেছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা স্বাভাবিক। অন্যান্য দিনে স্বাভাবিকভাবে ১০ থেকে ১২ জন রোগী মারা যায়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চললেও রোগী মৃত্যুর সংখ্যা স্বাভাবিক ছিল। গত শুক্রবার হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবে ১৪ জন ও শনিবার ১২ জন মারা গেছে। এই সংখ্যাটি অস্বাভাবিক নয়।
গত শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নগরীর সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপুর শাখায় কর্মকর্তা সিবিএ নেতা ও রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন খানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ রোগীর স্বজনরা এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর করে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর থেকে কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত হাসপাতলের পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক চলে। তাতে সমঝোতা না হওয়ায় তারা এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন এবং পাঁচ দফা দাবি জানান। এ ঘটনায় শনিবার রোগীর স্বজনদের নামে মামলা দায়ের করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে রোববার দুপুরে শর্তসাপেক্ষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।