গাজীপুরের মেয়র মান্নানের আরো দুই মামলায় জামিন নামঞ্জুর
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে আরো দুই মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার গাজীপুরের পৃথক দুটি আদালতের বিচারক মেয়র মান্নানের জামিন নামঞ্জুর করেন।
গাজীপুরের কোর্ট পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল হাই ও মাহবুবা আক্তারের পৃথক আদালত সোমবার সকালে শুনানি শেষে অধ্যাপক এম এ মান্নানের জামিন নামঞ্জুর করেন।
মো. রবিউল ইসলাম জানান, ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের আনসার একাডেমির সামনে পুলিশ বহনকারী একটি গাড়িতে পেট্রল বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মেয়র মান্নানসহ ২৭ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনের নামে কালিয়াকৈর থানার এসআই মো. মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলার শুনানি হয় গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবা আক্তারের আদালতে। বিচারক শুনানি শেষে তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন।
এ ছাড়া একই দিন (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের টিঅ্যান্ডটি আলিফ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রাস্তায় পেট্রল দিয়ে বাসে আগুন দেওয়া এবং যানবাহন ভাংচুরের অভিযোগে অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করে টঙ্গী থানার এসআই মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। সোমবার সকালে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আবদুল হাইয়ের আদালতে মামলার শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুরের আদেশ প্রদান করেন।
গত ১৫ এপ্রিল রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে ওই রাতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে আরো নয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরের দিন তাঁদের গাজীপুরের আদালতে হাজির করা হলে আদালত গ্রেপ্তারদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে মেয়র মান্নান গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ রয়েছেন।
২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসের নিজ বাসা থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জয়দেবপুর থানার একটি ফৌজদারি মামলায় মান্নানের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র ২০১৫ সালের ১২ মে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে গৃহীত হওয়ায় ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ তাঁকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। অধ্যাপক এম এ মান্নান ২২টি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনলাভের পর গত ২ মার্চ জামিনে কারামুক্ত হন।
কারামুক্তির পর গত ৩১ মার্চ এ সাময়িক বহিষ্কারাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন এম এ মান্নান। মেয়র মান্নানকে দেওয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ১১ এপ্রিল ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। পরে ১৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন।
অধ্যাপক এম এ মান্নানের অবর্তমানে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মেয়র মান্নানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ২৫টি মামলা রয়েছে।