‘নৌকাকে জয়ী করতে না পারলে কাউকে ছাড়ব না’
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক বলেছেন, কার ঠ্যাং ভাঙবেন আর কার হাত ভাঙবেন, তা জানি না। সকাল ১১টার মধ্যে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে হবে। নইলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আর নৌকার প্রার্থী জয়ী না হলে আগামী দিনে একটি টাকাও ওই ইউনিয়নের উন্নয়নে দেওয়া হবে না। urgentPhoto
গত ১৭ এপ্রিল রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সানজিদা খাতুন নাসিমার নৌকা প্রতীকের পক্ষে কর্মিসভায় এসব কথা বলেন আবদুস সাদেক। মরজাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে ওই কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়।
আবদুস সাদেকের বক্তব্যের অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাদেকের এসব বক্তব্য শুনে সভাস্থল থেকে অনেক নেতাকর্মী নীরবে সভাস্থল ছেড়ে চলে যান। আবদুস সাদেক রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। ওই ইউনিয়নে আর কেউ প্রার্থী না হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
সভায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আবদুস সাদেক বলেন, ‘যদি আপনারা এই আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মনোনীত প্রার্থী নাসিমাকে ভোট দিতে না পারেন, আগামী পাঁচ বছর এই মরজাল ইউনিয়নে একটি টাকাও উন্নয়ন করতে দেওয়া হবে না।... নাসিমাকে কীভাবে বিজয়ী করবেন আপনারা জানেন। যেভাবে তাঁকে বিজয়ী করেন আমাদের আপত্তি নেই। কাকে মারবেন, কাকে ধরবেন- আমরা জানি না। আমরা জানি, নৌকা মার্কা বিজয়ী করে আনতে হবে। যদি না আনতে পারেন, আপানাদের দেখব না, আপনাদের কাউকে আমরা ছাড়ব না।’
আবদুস সাদেক বলেন, ‘এই ইউপি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের মতোই। এখানে কোনো রকমের ছাড় দেওয়া চলবে না। জাতীয় নির্বাচন যেভাবে করেন, এই নির্বাচন সেভাবে করেন। কারণ মার্কা জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা। স্থানীয় নির্বাচনেও মার্কা নৌকা।’
আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক বলেন, ‘ভাইয়েরা সোচ্চার হোন। একটু শক্ত হাতে দাঁড়ান, শক্ত কিছু নিয়ে দাঁড়ান। আমরা আপনাদের পেছনে আছি। আওয়ামী লীগ আপনাদের পেছনে আছি। কার ঠ্যাং ভাঙবেন, কার হাত ভাঙবেন আমরা জানি না। নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে আনতে হবে। এর ভেতরে কে পড়ে আমরা জানি না। চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। প্রত্যেক সেন্টারে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করুন। এই ৫১ জনকে জিজ্ঞাসা করব কোনো সেন্টার থেকে যদি নৌকা ফেল করে। আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। জানি না কী করবেন, সিল মারবেন, না কী মারবেন, জানি না। আমরা যাকে মনোনয়ন দিয়েছি তাকে আপনাদের উঠাইয়া আনতে হবে। নতুবা আপনাদের জবাবদিহি আছে। দয়া কইরা সিল মারবেন না কী করবেন এ আপনাদের বিষয়। আমরা এটা দেখতে আসব না। তবে আমরা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে আপনাদের যা যা লাগে তাই দেব, যেকোনো সহযোগিতা লাগলে দেব।’
এসব কথা শুনে নেতাকর্মীরা কিছুক্ষণ ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান ও হাততালি দেন।
স্লোগান থামলে আবদুস সাদেক বলেন, ‘প্রিয় ভাইয়েরা, এখনো আপনারা যারা দাঁড়িয়ে আছেন, হাজার হাজার মানুষ। আপনার ইচ্ছা করলে নাসিমাকে (আওয়ামী লীগের প্রার্থী) পাস করাতে পারেন। আপনাদের পায়ে হাত রেখে বলছি, একজন করে যদি, প্রতিজনে যদি ৫০টা করে ভোট কামাই করেন, তাইলে ভোট ভৈরব থানায় বেঁচতে পারবেন, আল্লাহর রহমতে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আবদুস সাদেক বলেন, ‘আপনাদের যা যা লাগে আমরা দিয়ে দেব। নাসিমাকে পাস করান।... আমাদের প্রার্থীকে পাস করাতে হবে। সোজা কথা পাস চাই। এখানে কী করবেন না করবেন আপনাদের বিষয়। আমার মনে হয় সকাল ১১টার আগে সাইরা রাখলেই (সিলমারা) ভালো।’
এই কথা শুনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। এরপর ধন্যবাদ জানান তিনি। এ সময় মাঝপথে একজন বক্তা বলেন, ‘সাদেক ভাই যে কথা বলছে, আমরা ১০টার মধ্যে ইনশাল্লাহ সাইরা ফেলাব। চিন্তা করার কিছু নাই।’ এরপর আবদুস সাদেক আবার মাইকে বলেন, ‘নির্বাচন বন্ধ হোক আপত্তি নাই। তয় ১১টার আগে শেষ কইরা হালাইয়েন।’ এরপর জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তব্য শেষ করেন আবদুস সাদেক।
কর্মিসভায় বক্তব্য দেন রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইউনুছ আলী ভূঁইয়া, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিলন মাস্টার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম এ রব, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সানজিদা খাতুন নাসিমা প্রমুখ।