মেয়র পদে মনজুরের জন্য বিএনপি নেতাদের সুপারিশ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এম মনজুর আলমকে আবার মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেছেন চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে এ সুপারিশ করা হয়।
আজ দুপুরে চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতারা একে একে জড়ো হন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মেহেদীবাগের বাসায়। একপর্যায়ে সেখানে যান সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলম। নির্বাচন নিয়ে প্রথমবারের মতো এ বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
আবদুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মনজুর আলম মঞ্জু সাহেবকে আমরা মনোনয়ন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করছি। আমরা এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, মনজুর আলম আমাদের আগামী দিনের প্রার্থী হবেন ইনশাল্লাহ। কেন্দ্র থেকেও এ সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমাদের আশা।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই নির্বাচনে যাচ্ছি এবং আমরা সেভাবেই এগুবো।’
এ সময় সাংবাদিকদের জানানো হয়, সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকা কী হবে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ইতিবাচক হলে মেয়র পদে সমর্থনের বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার জন্য কেন্দ্রের নির্দেশে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক থেকে বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলমকে সমর্থন দেওয়ার জন্য দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি সুপারিশ করেন চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বন্দরনগরীর জিইসি মোড়ের একটি কনভেনশন সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন’ মনজুর আলমকে তাদের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়। গতবারও মনজুর এই সংগঠনের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করে জয়ী হন।
সংবাদ সম্মেলনের পর পরই এ ব্যাপারে মনজুর আলমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতবারও আমি চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে তাদের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলাম। গতবারের মতো এবারও তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমি নির্বাচন করব। তবে আমি গতবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে নির্বাচনের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমর্থন পেয়েছিলাম। আশা করছি, এবারও তিনি আমাকে সমর্থন জানাবেন।’
এর আগে গত মঙ্গলবার মেয়র পদে মনজুরকে বিএনপির সমর্থন দেওয়ার খবর চাউর হতেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলমের কুশপুতুল পুড়িয়েছিল মহানগর ছাত্রদলসহ বিএনপি সমর্থিত একাধিক সংগঠন। চট্টগ্রামে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে মনজুর আলমকে প্রত্যাখ্যান করার কথাও জানিয়েছিল এসব সংগঠন।
এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে থাকেন না এমন একজন বঙ্গবন্ধুর সৈনিককে মেয়র পদে আবারও সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপিয়ে দেওয়া এম মনজুর আলমকে গ্রহণ করা হবে না বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন নগর ছাত্রদলের সহসভাপতি জসিম উদ্দিনও। তিনি বলেছিলেন, ‘বিএনপির অনেক নেতা আছেন যাঁরা মেয়র পদে যোগ্য।’ আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ রাজি না হলে গোলাম আকবর খোন্দকার বা ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
২০১০ সালের ১৭ জুন মেয়র নির্বাচনে সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা এম মনজুর আলম বিএনপির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ৯৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর তাঁকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে হলে মনজুরকে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে আগামী রোববারের মধ্যে। তবে বুধবার সিটি করপোরেশনে তাঁর মেয়াদের শেষ সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ করলেও পদত্যাগের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি মনজুর আলম। গতকাল দিনভর গুজব ছিল, বুধবারই মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করছেন মনজুর আলম।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯-এর উপধারা (২) (ঙ) অনুযায়ী, মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তাকে প্রার্থী হতে হলে পদত্যাগ করে তা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত কপি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলররা পদত্যাগ না করেও নির্বাচন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২৯ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়, ১ ও ২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ৯ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামী ২৮ এপ্রিল ভোট গ্রহণ করা হবে।