রানা প্লাজার টাকা কই : খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, এ দেশের শ্রমিকরা আজ ভালো নেই। তাঁদের ওপর নানা নির্যাতন-অত্যাচার হচ্ছে।
ইতিহাসের ভয়াবহতম রানা প্লাজা ধসের কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এক নেতা দখল করা জায়গায় রানা প্লাজা গড়েছিলেন। সেই রানা প্লাজা ধসে শত শত শ্রমিক মারা গেল। অনেকে আহত হয়েছে। এখনো অনেক শ্রমিকের খোঁজ পায়নি স্বজনরা। এই সরকার আহত-নিহতদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই হচ্ছে অবৈধ সরকারের কার্যক্রম। রানা প্লাজার শ্রমিকদের জন্য অনেক টাকা ওঠানো হয়েছে। কোথায় গেল সেই টাকা? শ্রমিকদের ভাগ্যে সেই টাকা গেল না কেন?’
বিএনপি চেয়ারপারসন আরো বলেন, ‘আজকে দেশে সরকারি দল ছাড়া কারো কোনো অধিকার নেই। শ্রমিকদের কোনো অধিকার নেই। এই সরকার মানুষকে মানুষ মনে করে না।’
মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। আজ রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন মহান মে দিবস উপলক্ষে দেশ-বিদেশের শ্রমিক শ্রেণির প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়া তাঁর আমলে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান খালেদা জিয়া। এর আগেই সমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে শ্রমিক দল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এই সরকারের আমলে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাও করেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
‘বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাব না’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাব না। আমাদের ছেলেদের বলা হয়েছিল, তোমরা দেশ ছেড়ে চলে যাও তোমাদের কিছু হবে না। কিন্তু আমার ছেলেরা বলেছে, আমরা দেশ ছেড়ে যাব না। বিদেশে আমাদের কিছু নেই। আমাদের মা এখানে আছে, আমাদের বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে। যেতে চায়নি বিধায় তাদের এই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।’
এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জেলে থাকাকালীন বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে চেষ্টা করেও দেখা না হওয়া এবং তারপর তাঁর মারা যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার পরিবারকে শেষ করেছে। আমার বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই, বোন নেই। আপনারাই আমার সব, এই শ্রমিক-কৃষক মেহনতি জনতাই আমার সন্তান। আপনারাই আমার ভরসা। আমার একমাত্র ছেলে তারেক, সে বিদেশে বসে আপনাদের কথা ভাবে। আমি যখন লন্ডনে গেলাম, তাদের কাছে বেশ কিছুদিন ছিলাম। কিন্তু এ সময়েও তারা রটিয়ে দিল যে, আমি নাকি দেশে আসব না। আমি ফিরে এসেছি আপনাদের মাঝে।’
তিন সাংবাদিকের মুক্তি দাবি
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সাংবাদিক শফিক রেহমানকে সাংবাদিক পরিচয়ে ভোরবেলা ধরে নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি রাজনীতি করেন না। আমাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। শফিক রেহমানের দোষ কি? আজকে স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশে নিয়ে গেছেন। এর কাগজপত্রই তিনি সংগ্রহ করেছেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি এটা করতেই পারেন। তিনি কিন্তু কোথাও সেটা প্রচার করেননি, লেখেননি। সেই কাগজ তাঁরা নিয়ে গেছেন। শফিক রেহমানকে ধরা না হলে এই কথাটা আপনারা জানতে পারতেন না। তাঁরা মনে করেন, কাগজগুলো নিয়ে গেলেই বোধ হয় শেষ। কিন্তু না। এই কাগজ শুধু বাংলাদেশে না, আরো অনেক জায়গায় আছে। এটা আর চাপা দেওয়া যাবে না।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শফিক রেহমানের সঙ্গে মাহমুদুর রহমানকে জড়ানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা নাকি জয়কে গুম ও খুন করতে চেয়েছিল। তারা এর সঙ্গে জড়িত না। এরা এ ধরনের লোক না। তাই অবিলম্বে শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান ও শওকত মাহমুদের মুক্তি দাবি করছি।’
‘হত্যাকারীদের সঙ্গে আ.লীগ সংশ্লিষ্ট’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শেখ হাসিনা বলে, বিএনপি নাকি ক্ষমতায় আসতে না পেরে গুপ্তহত্যা করছে। ক্ষমতায় যাব কীভাবে, নির্বাচন কি হয়েছে। বিএনপি চোরাপথে ক্ষমতায় যেতে চায় না। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তো ক্ষমতায় গেছেন চোরাপথে। তাই বলছি, আপনি ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন দিন। দেখুন, বিএনপি আছে কি নাই। জনগণ কাদের পক্ষে যাচাই করুন। আমরা গণতন্ত্রের দাবি করছি। গণতন্ত্র না থাকলে মানবাধিকার থাকে না, কিছুই থাকে না। মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।’
‘আমি বলতে পারি, এত মানুষ মারা গেল। এর একটাও বিচার হয়েছে। কাউকে ধরতে পেরেছেন? কেন ধরতে পারা যায় না। কারণ, এরা সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তার জন্যই তাদের ধরা যায় না। আজকে আমি জানতে চাই, সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকারীরা কি ধরা পড়েছে, বিচার হয়েছে? হত্যাকারীরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়, তারপর আবার হত্যা করে। কারণ, তারা জানে তাদের প্রটেকশন দেওয়ার লোক আছে’, যোগ করেন খালেদা জিয়া।
‘রিজার্ভ চুরির ঘটনার বিচার হবে’
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরি হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এই সরকারের সময় ব্যাংক থেকে টাকা লুট করা হয়েছে। বিদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক থেকে টাকা লুট হয়েছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। রিজার্ভ চুরি ও ব্যাংক লুটের ঘটনার বিচার হবে।