রায় পুনর্বিবেচনার গ্রাউন্ড পাননি আদালত : অ্যাটর্নি জেনারেল
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার কোনো কারণ আদালত খুঁজে পাননি।
আজ সোমবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনে দণ্ড কমানোর কথা বলায় জামায়াতের আমির অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন, তা বলা যাবে না। সোমবার (৯ মে) প্রকাশিত রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন কথাই বলা হয়েছে।’
রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায়টি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) হওয়ার মতো কোনো গ্রাউন্ড তাঁরা (আপিল বিভাগ) খুঁজে পাননি। বিশেষ করে, তাঁর মৃত্যুদণ্ডকে পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করার প্রার্থনা ছিল। দণ্ড সম্পর্কে তারা যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, এ বিষয়ে আদালত বলেছেন, তাঁর অপরাধ এত জঘন্য ছিল এবং যাঁরা নাকি ভিকটিম তাঁরা প্রত্যেকে তাঁর এই কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষুব্ধ। এ ধরনের অপরাধীদের দণ্ড মওকুফের কারণ নেই- এ কথা বলে আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে।’
‘এ অবস্থায় নিজামী আর অপরাধে যুক্ত নন, এ কথা বলে যাবে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যেহেতু নিজামীর আইনজীবীরা দণ্ড মওকুফের কথা বলেছেন, কাজেই এ সমস্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন, তা বলা যাবে না।’
রায় কার্যকরের ব্যাপারে মাহবুবে আলম বলেন, ‘রায় কার্যকর করা এখন সরকারের বিষয়। সরকার নির্ধারিত সময়ে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা কার্যকর করবে।’
আজ সোমবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে নিজামীর রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়। রায়ে চার বিচারপতির সবাই সই করেছেন। রায়ের কপি এখান থেকে যাবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে। এরপর টাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ সেটা পাঠাবে কারাগারে।
গত ৫ মে (বৃহস্পতিবার) আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এর আগে গত মঙ্গলবার রিভিউ শুনানি শেষে ৫ মে রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আপিলেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহালের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত ২৯ মার্চ আবেদন করেন নিজামী। ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউ আবেদনের সঙ্গে ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে তাঁর দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি (গ্রাউন্ড) যুক্তি তুলে ধরা হয়।
গত ১৫ মার্চ নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর এ রায় প্রকাশ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিনটি অপরাধে গত ৬ জানুয়ারি মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে নিজামীর করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় ঘোষণা করা হয়।
বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের রায় গত ৬ জানুয়ারি ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।