‘শেষ দেখা’ করতে কারাগারে নিজামীর স্বজনরা
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের প্রস্তুতির মাঝেই ‘শেষ দেখা’ করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছেন তাঁর স্বজনরা। আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে কারাগারের পথে রওনা হয়ে রাত ৮টায় কারাফটকে পৌঁছেন নিজামীর পরিবারের কয়েকজন।
নিজামীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, আজ বিকেলে কারা কর্তৃপক্ষ ফোন করে পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে ডাকে। স্বজনদের মধ্যে নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী, ছেলে নাজীব, বড় পুত্রবধূ, দুই নাতি, ছোট মেয়ে মহসীনা, নিজামীর চাচাতো ভাই এবং ভাইয়ের মেয়েসহ আঠারোজন নিকটাত্মীয় রয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কারাগারের ভেতরেই অবস্থান করছেন নিজামীর স্বজনরা।
কারাগারের প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী দণ্ড কার্যকরের আগে দণ্ডিতের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ করানো হয়।
এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এর মধ্যেই সাবেক এই মন্ত্রীর সাজা কার্যকরের আবহ। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেছেন জল্লাদ রাজু। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেছেন, যে কোনো মুহূর্তে দণ্ড কার্যকরে প্রস্তুত সরকার।
এদিকে কারাসূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করতে জল্লাদ রাজু ও সহযোগীরা মহড়া শুরু করেছেন। ফাঁসি দেওয়ার আগে জামায়াত নেতাকে গোসল করানো হবে এবং জমটুপি পরিয়ে ফাঁসিমঞ্চে তোলা হবে। এ সময় উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা, জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ওই সূত্র আরো জানায়, জল্লাদ রাজুর নেতৃত্বেই নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হতে পারে। এর আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করেছিলেন রাজু। এ ছাড়া জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়ও সহযোগী ছিলেন রাজু।
গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে নিজামীকে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় পড়ে শোনানো হয়। এদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় প্রকাশ করেন। এরপর বিকেল ৫টার কিছু পর আপিল বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে লাল কাপড়ে মোড়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে রওনা হয়। পরে ৭টা ৫ মিনিটে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর রায়ের কপি নেন।
গত রোববার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়।
গত ৫ মে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জামায়াত নেতা। পরে আপিলের রায়েও তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ, ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি।