সাফাদিকে মোসাদের চর বলায় ভারতে বিস্ময়
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠককারী ইসরায়েলি নাগরিক মেনদি এন সাফাদিকে গুপ্তচর বলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ভারতের এক সেনা কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তাবিষয়ক একটি সংগঠন।
মেজর জেনারেল গগনদীপ বক্সি নামের ওই সেনা কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, সাফাদি একজন গবেষক ও রাজনীতিবিদ এবং নানা বিষয়ে কথা বলতে তিনি বেশ ঘন ঘনই ভারতে আসেন।
বর্তমান সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে আসলাম চৌধুরীকে গতকাল রোববার ঢাকায় আটক করা হয়। আজ সোমবার তাঁকে আদালতে হাজির করে পুলিশ সাতদিনের রিমান্ডে নেয়।
দিল্লির সেমিনারে সাফাদিকে আমন্ত্রণকারী সংগঠন ‘ভারতীয় সিটিজেনস সিকিওরিটি কাউন্সিল’ সংগঠন বিবিসিকে জানায়, দিল্লিতে এসে আসলাম বাংলাদেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করবেন সেটা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য।
সংগঠনটি আরো জানায়, মেনদি এন সাফাদি নামের ওই ইসরায়েলি একজন গবেষক ও রাজনীতিক এবং তিনি মোসাদের কেউ নন। যে আগ্রা শহরের মেয়রের উপস্থিতিতে সাফাদি ও আসলাম চৌধুরীর দেখা হয়েছিল বলে অভিযোগ, মেয়র ইন্দ্রজিৎ বাল্মীকিও বিবিসিকে বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানে তাঁদের মধ্যে সাক্ষাৎ হলেও হয়ে থাকতে পারে।
ওই সংগঠনের আহ্বায়ক বিজয় কুমার বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় আমরা নানা মতের লোকজনকে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম দেই। তাঁদের সঙ্গে এটুকুই আমাদের সম্পর্ক। সাফাদিকেও এভাবেই আমরা ডেকেছিলাম। কিন্তু দিল্লিতে এসে তিনি আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হবেন এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উনি আমাদের সেমিনারে ১০ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন, ব্যাস এটুকুই।’
মেজর জেনারেল গগনদীপ বক্সি বিবিসিকে জানান, মেনদি এন সাফাদি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য।
ওই সেনা কর্মকর্তা আরো জানান, ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস নামে সাফাদির একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে এবং ভারতের একাধিক বিশেষজ্ঞর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
বিবিসিকে গগনদীপ বক্সি বলেন, ‘ইসরায়েলে ওনার ভূমিকা নিয়ে আমি জানি না, তবে ইসরায়েল সরকারের খুব উঁচু মহলে ওনার প্রভাব আছে বলেই আমার মনে হয়েছে। খুব জ্ঞানী লোক, অনেক কিছু জানেন। তিনি ইসরায়েল সরকারের অংশ এবং নিজে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।’
সাক্ষাতের স্থান কোথায়?
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাফাদির দেখা হয়েছিল আগ্রায়; দিল্লিতে নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন আগ্রা শহরের মেয়র ইন্দ্রজিৎ বাল্মীকি। তাঁর উপস্থিতিতে উভয়কে মালা পরানো হয়। উপলক্ষটা ছিল আগ্রার সঙ্গে ইসরায়েলের একটি শহর সামারিয়াকে টুইন সিটি হিসেবে ঘোষণা করা।
আগ্রার মেয়র ইন্দ্রজিৎ বাল্মীকি বলেন, ‘এই টুইন সিটির প্রস্তাবটা এসেছিল ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের কাছ থেকেই। ওরাই আমার সঙ্গে দেখা করতে চান, আমি তাজমহলে সেই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করি।
সেখানেই সাফাদি এসেছিলেন। আরো হয়তো অনেকে এসেছিলেন, সবাইকে তো আমার পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। অনেক বড় দল ছিল।’
ওই সময় আসলাম চৌধুরীর উপস্থিতির ব্যাপারে মেয়র ইন্দ্রজিৎ অস্বীকার করেননি। কিন্তু একই সঙ্গে বলছেন আসলাম চৌধুরী যে বাংলাদেশি নাগরিক সেটাই তিনি জানতেন না।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আগ্রার মেয়রের কার্যালয়েরই একটি সূত্র বিবিসিকে জানায়, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আসলাম চৌধুরীর ব্যবসার কাজে আগ্রাতেও যাতায়াত আছে, ওই সুবাদেই তিনি হয়তো শহরের মেয়রের আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে থাকতে পারেন। তবে একই অনুষ্ঠানে সাফাদি ও আসলাম চৌধুরীর দেখা হয়ে থাকলেও উভয়ের মধ্যে কোনো বৈঠকের খবর জানা নেই বলেই সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
অভিযোগ ওঠেছে, আসলাম সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে ইসরায়েলি লিকুদ পার্টির এক নেতার সাথে বৈঠক করেছেন। যাকে 'মোসাদ-সংশ্লিষ্ট' বলে উল্লেখ করে কয়েকটি সংবাদপত্র।