শিক্ষার্থী পেটানো সেই শিক্ষকের জামিন
শিক্ষা সফরের (বনভোজন) চাঁদা না দেওয়ায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চণ্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪২ শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পেটানোর অভিযোগে আটক সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আলীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে রাজশাহী আমলি আদালত-১-এর বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসানের আদালত তাঁকে জামিন দেন।
বিচারক চণ্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির জিম্মায় শিক্ষক মোহাম্মদ আলীকে জামিন দিয়েছেন। এর আগে গত শনিবার রাতে আবদুল খালেক নামের এক অভিভাবক বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বাঘা থানায় মামলা করেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সকালে পুলিশ ওই শিক্ষককে আদালতে পাঠায়।
এ ঘটনা তদন্তে আজ রোববার সকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এস এম তুহিনুর আলম, বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাদল চন্দ্র হালদার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী আবদুল মোকিম ও বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন।
চণ্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপন সাহা ও মোশাররফ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের সময় ১১ শিক্ষকের মধ্যে নয়জন উপস্থিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম অভিভাবকদের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলায় তাঁর দুটি দাঁত ভেঙে গেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এস এম তুহিনুর আলম জানান, বিদ্যালয়ে কিছু অনিয়ম রয়েছে। প্রমাণ সাপেক্ষে সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র হালদার জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। যারা অপরাধী, তাদের শাস্তি হবে। এ ব্যাপারে এখনই বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব নয়।
হাফিজুর রহমান ও মহিউদ্দিন নামের দুই অভিভাবক জানান, পিকনিকের টাকা না পেয়ে সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বিদ্যালয়ের ৪২ শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পিটিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের মারধরের অভিযোগ আগেও ছিল। এর আগে বিদ্যালয়ের পোশাকের টাকার জন্যও তিনি শিক্ষার্থীদের বেদম পিটিয়েছিলেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, যে শিক্ষক অপরাধ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বনভোজনের চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় শনিবার সকালে শিক্ষক মোহাম্মদ আলী অষ্টম শ্রেণির ৪২ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, রোববার বিদ্যালয় থেকে বার্ষিক বনভোজনে যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি ১০০ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। চাঁদা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আলীকে। অষ্টম শ্রেণিতে ১০৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই ১০০ টাকা চাঁদা দিয়ে বনভোজনে যেতে চায়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বেদম পিটুনি দেন।
এ ঘটনায় উত্তেজিত অভিভাবকরা বিদ্যালয় ঘেরাও করলে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম তাঁদের শান্ত করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন। অভিভাবকদের হামলায় তাঁর দুটি দাঁত ভেঙে যায়।