হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে : আইনমন্ত্রী
‘যদি হাইকোর্ট সেরকমভাবে কোনো নির্দেশনা দিয়ে থাকে তাহলে সে নির্দেশনা মেনেই আমাদের চলতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জে লাঞ্ছিত প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে ‘বেলাজিও ফ্রি শপ’ শীর্ষক শুল্কমুক্ত বিপণি কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
গত ১৩ মে (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলের সামনের একটি মসজিদ থেকে হঠাৎ করেই মাইকে ঘোষণা করা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন এবং সেখান থেকে এলাকাবাসীকে স্কুল মাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে স্কুলে ঢোকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁরা স্কুলের দরজা ভেঙে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়।
সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করার শাস্তি দেন।
কান ধরে ওঠ-বসের পর সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। এর পর পুলিশ চিকিৎসার জন্য তাঁকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে।
গত সোমবার শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গতকাল বুধবার হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আগামী তিনদিনের মধ্যে জানাতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। এতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন বলে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এর ভিত্তিতে কমিটি তাঁকে স্বপদে বহালের সুপারিশ করেছে। তদন্ত কমিটি স্কুলের আগের কমিটি বাতিলের সুপারিশ করে।
সমাবেশে এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সব অন্যায়ের বিচার এদেশে হবে। যেহেতু আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি সুতরাং নিশ্চয়ই অন্যায়ের বিচার হবে।’
আনিসুল হক আরো বলেন, ‘সকল ষড়যন্ত্রকে হারিয়ে আমাদের দেশ গড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের সন্তানের মতো বাংলাদেশকে গড়ে তুলছেন। ফলে উন্নয়নকে ধরে রাখলেই তা হবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেরা উপহার।’
আনিসুল হক আরো বলেন, ‘বিএনপির জন্মই হয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তারপর ষড়যন্ত্র করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, পাকিস্তানি হানাদারদের সহচরদের সরকারে প্রতিষ্ঠা, ১৯ বার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা। তবে সব চেষ্টা যখন ব্যর্থ তখন তারা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।’
বেলাজিও লিমিটেডের চেয়ারম্যান তৌফিক উদ্দিন আহামেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য এ এফ এম শাহরিয়ার মোল্লা, কাস্টমস কমিশনার আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আজিজুল হক, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব রাশেদুল কায়সার জীবন, আখাউড়া পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন।
এর আগে আখাউড়া পৌরসভায় আইনমন্ত্রী তাঁর স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘নূর আনতুল্লা রিনা হক স্মৃতি পৌর পাঠাগার’-এর উদ্বোধন করেন।