যশোরে ‘ট্রাকচাপায় দুই বোমাবাজ’ নিহত
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বেগারিতলা এলাকায় ট্রাকচাপায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, এই দুজন ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুঁড়তে গেলে চালক ভয়ে তাঁদের চাপা দিয়ে চলে যান। গতকাল সোমবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ (৩০) ও চা দোকানি মো. লিটন (২৮)। তাঁদের স্বজনদের দাবি, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বেগারিতলা এলাকায় একটি মাছবাহী পিকআপে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই দুজনকে পুলিশ আটক করেছিল।
নিহত ইউসুফের বাড়ি মনিরামপুরের তাহেরপুর গ্রামে। আর লিটনের বাড়ি দুর্গাপুর গ্রামে। তাঁদের লাশ যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা খবিরউদ্নি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পেট্রলবোমা ছুড়তে গেলে ট্রাকড্রাইভার মোটামুটি চাপা দিয়ে চলে গেছে।’ সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে এ ঘটনা বলে তিনি জানান।
তাঁরা বোমাবাজ ছিলেন তা কীভাবে বুঝতে পারলেন –এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘পেট্রলবোমা রয়েছে তো সাথে। আর লোকজন বলতেছে না? সেই ট্রাকড্রাইভারও তো সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে, পেট্রলবোমা মারতে গেছিল। আরো অনেকেই বলেছে। গাড়িঘোড়া চলেছে তো রাতে।’
ট্রাক চাপা দিলে পেট্রলবোমা আস্ত পাওয়া সম্ভব কিনা – এমন প্রশ্নে মোল্লা খবিরউদ্দিন বলেন, ‘আরে ভাই এত কোয়ারি (প্রশ্ন) করলে তো হবে না। আমি পেট্রলবোমা পাইছি, তাই বললাম আপনাকে।’
নিহতদের স্বজনরা বলছেন, তাঁদের আগেই আটক করা হয়েছিল –এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘স্বজনরা কত কথা কয়! আমরা আইনের লোক আইনের কথা কই, স্বজনরা স্বজনদের কথা কয়। যখন পেট্রলবোমা মাইরা বেড়ায়, স্বজনরা তো তখন কিছু কয় না।’ নিহত দুজনই বিএনপির কর্মী বলে ওসি জানান।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সোমবার দিবাগত রাত ৪টা ১০ মিনিটে মনিরামপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তাসনিম লাশ দুটি হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্বজন ও স্থানীয় বিএনপির ভাষ্য
নিহত ইউসুফের মা রওশন আরা এনটিভিকে বলেন, তাঁর ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এমন খবর পেয়ে তিনি খাবার নিয়ে মনিরামপুর থানায় যান। থানায় গিয়ে জানতে পারেন, ইউসুফ নামে কেউ নেই। পরে তাঁরা যশোরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দুজনের মরদেহ দেখতে পান।
রওশন আরো বলেন, ইউসুফ কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
নিহত লিটনের এক ভাই বলেন, তাঁর (লিটন) একটি চায়ের দোকান ছিল। মাঝেমধ্যে মোটরসাইকেলও চালাতেন। তিনি বলেন, গতকাল সোমবার রাতে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। মনিরামপুর বাজার থেকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে যশোর সদর হাসপাতালে গিয়ে লিটনের লাশ পাওয়া যায়।
লিটনের ভাই আরো বলেন, লিটনকে কোনোদিনই রাজনীতিতে করতে দেখেননি তিনি।
লিটনের আরেক বায়োবৃদ্ধ স্বজন বলেন, মাগরিবের পর গাড়ি নিয়ে ইউসুফের সঙ্গে লিটন বের হয়েছিল। এর পর থেকে সারা রাত বাড়ি ফেরেনি। তাঁর ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল দাবি করেন, নিহত দুজন যুবদলের কর্মী। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে মনিরামপুর কলেজের কাছে একটি গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরপরই পুলিশ যুবদলকর্মী ইউসুফ ও লিটনকে আটক করে বলে এলাকাবাসী জানতে পারে। আজ সকালে শুনি, পুলিশ দুজনকে মৃত অবস্থায় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়েছে।’