রিমান্ড শেষে মেয়র মান্নান ফের কারাগারে
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে নাশকতার মামলায় দুদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক এম এ মান্নানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গাজীপুরের আদালত পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, কালিয়াকৈর থানার নাশকতার একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এম এ মান্নানকে গতকাল শনিবার দুপুরে দুদিনের রিমান্ডে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে কালিয়াকৈর থানায় নেওয়া হয়। কালিয়াকৈরে পুলিশ বহনকারী গাড়িতে পেট্রলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ দুপুরে তাঁকে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (ডিজিটাল আদালত) তাহমিনা খানম শিল্পীর আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক এম এ মান্নানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোতালেব জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আনসার একাডেমির পাশে সাইদুরের বাড়ির সামনে গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় মেয়র মান্নানের নির্দেশে তাঁর কর্মীরা পুলিশ বহনকারী একটি গাড়িতে পেট্রলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় এম এ মান্নানসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে এসআই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় নাশকতার একটি মামলা করেন। দায়ের করা ওই মামলায় এম এ মান্নানের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে গত ৪ মে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত ২-এ হাজির করা হয়। শুনানি শেষে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন ওই আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম।
নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এম এ মান্নানকে গত ১৫ এপ্রিল রাতে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায়, কালিয়াকৈরের আনসার একাডেমির সামনে এবং টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি আলিফ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ পৃথক নাশকতার ঘটনা ঘটে। এ তিনটি ঘটনায় এম এ মান্নানকে প্রধান আসামি করে জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে টঙ্গী থানার নাশকতার মামলায় একদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এম এ মান্নানকে গত ১ জুন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসের নিজ বাসা থেকে এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর একের পর এক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জয়দেবপুর থানার একটি ফৌজদারি মামলায় মান্নানের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র ২০১৫ সালের ১২ মে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে গৃহীত হওয়ায় ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ মেয়র পদ থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর গত ২ মার্চ জামিনে কারামুক্ত হন এম এ মান্নান।
এম এ মান্নান গত ৩১ মার্চ মেয়র পদ থেকে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। মেয়র মান্নানকে দেওয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ গত ১১ এপ্রিল ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরে ১৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন।
এরপর নতুন করে গ্রেপ্তারের পর গত ১৯ এপ্রিল ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১২-এর উপধারা (১)-এর ক্ষমতাবলে স্থানীয় সরকার বিভাগ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নানকে আবারও সাময়িক বরখাস্ত করে।
এম এ মান্নানের অবর্তমানে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ২৫টি মামলা রয়েছে।