মাহি-শাওনের পরিবারের আপসনামা ভিত্তিহীন
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তাঁর কথিত স্বামী শাওনের পরিবারের মধ্যে করা আপসনামাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন শাওনের আইনজীবী বেলাল হোসেন। আজ মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনের কাছে তিনি এ দাবি করেন।
বেলাল হোসেন বলেন, ‘যেহেতু এ আপসনামা শাওন ও মাহির মধ্যে হয়নি, তাই এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। যেহেতু তাঁরা দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক। আইনগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র তাঁদেরই। আপসনামায় মাহির কোনো স্বাক্ষর ছিল না। শুধু মাহির পিতা ও শাওনের পিতার স্বাক্ষর রয়েছে। এমনকি সাক্ষীর তালিকায়ও মাহির কোনো স্বাক্ষর বা নাম নেই।’
শাওনের আইনজীবী আরো বলেন, আপসনামা হবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে। আপস তাঁদের দুজনকেই করতে হবে।
বেলাল বলেন, আপসনামার ৩ নম্বর কলামে বলা আছে, ‘আমার ছেলে শাহরিয়ার ইসলাম (শাওন) বর্তমানে জেলে। তাই তাঁর পক্ষে আমি এবং তার মা অঙ্গীকার করতেছি যে, সে জেল থেকে বের হবার পরে বাদিনী অথবা তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনোরকম অভিযোগ তথা মামলা করিতে পারিবে না। তাদের ক্ষতি হয় এমন কোনো আচরণ করিতে পারিবে না।’
উল্লিখিত আপসনামাটিকে সম্পূর্ণ একপেশে বলে দাবি করেন বেলাল হোসেন। তাঁর মতে, এ আপসনামায় মাহির পক্ষেই শুধুই বলা হয়েছে। পুরো আপসনামায় শাওনের মামলার বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। মামলার ক্ষেত্রে শাওন কোনো সুবিধা পাবে বলে মনে হয় না।
বেলাল হোসেন জানান, শাওন জামিন পাওয়ার পর মাহির বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেবেন। আগামী ১৬ জুন শাওনের জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
আপসনামার সময়কাল
গত রোববার (৫ জুন) মাহির বাবা ও শাওনের বাবার মধ্যে একটি আপসনামা করা হয়। ওই দিন বেলা ৩টার দিকে মাহির উত্তরার বাসায় উভয় পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে ৩০০ টাকার দলিলে এই আপসনামা স্বাক্ষরিত হয়। এতে স্বাক্ষর করেন মাহির বাবা আবু বকর ও শাওনের বাবা নজরুল ইসলাম। সাক্ষী ছিলেন শাওনের বড় চাচা আবুল হাশেম ও ছোট চাচা মাহমুদুল হাসান। আপসনামাটি মো. ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে নোটারি পাবলিক করা হয়েছে। তাঁর চেম্বার দেখানো হয়েছে হলরুম-১, সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশ। নোটারি সিরিয়াল-৩৩ ও তারিখ ৫-৬-২০১৬ দেখানো হয়েছে।
অন্য আইনজীবীর ভাষ্য
ঢাকা বারের ফৌজদারি আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাইবার ট্রাইব্যুনালের মামলা আপসযোগ্য নয়। কোনো আপসনামা করতে হলে বাদী এবং আসামিকে স্বাক্ষর করতে হবে। কেননা, তাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক। ভালো-মন্দ বোঝার তাঁদের ক্ষমতা আছে। এ ছাড়া আসামি কারাগারে থাকলে বাদী হলফনামার মাধ্যমে আসামি আপস হয়েছে মর্মে আদালতকে অবহিত করতে পারেন।’
মাহির তথ্যপ্রযুক্তি মামলায় গত ৩১ মে শাওনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। ওই দিন শাওনের আইনজীবী আদালতে মাহির ‘আগের বিয়ের কাবিননামা’ দাখিল করেন।
‘কাবিননামাতে’ মাহির নাম শারমীন আক্তার নিপা ওরফে মাহিয়া দেওয়া হয়েছে। এতে চার লাখ টাকা দেনমোহরানা ধার্য করা হয়েছে ও বিয়ের তারিখ দেওয়া হয়েছে ২০১৫ সালের ১৫ মে।
গত ২৮ মে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন নায়িকা মাহি। অভিযোগটি তিনি করেন কথিত প্রেমিক ও স্বামী শাওনের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই শাওনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারের সময় ডিবি দক্ষিণ বাড্ডার বাসা থেকে শাওনের কম্পিউটার জব্দ করে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কথিত স্বামী শাওনের বাসা থেকে তাঁর কম্পিউটার জব্দ করেছি। সেখানে কিছু ছবি পেয়েছি, যা জব্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যে শাওন স্বীকার করেছে যে সে নিজেই এই ছবিগুলো ফেসবুকে আপ করেছিল।’
ঢাকাই ছবির নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে ব্যবসায়ী পারভেজ মাহমুদ অপু বিয়ে করার পরদিন থেকেই কয়েকটি গণমাধ্যমে মাহির ‘একাধিক বিয়ে-সংক্রান্ত’ কিছু ছবি প্রকাশ হতে থাকে। সেখানে ছবি প্রকাশের পাশাপাশি দাবি করা হয়, এর আগেও একাধিকবার মাহির বিয়ে হয়েছে।
ছবি প্রকাশের পর থেকে আলোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। বিষয়টি নজরে এলে নায়িকা মাহি বলেন, তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার সংসার ভাঙার জন্য কেউ আমার পিছু লেগেছে।’
গ্রেপ্তারকৃত শাওন গুলশানের একজন ব্যবসায়ী। তিনি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
শাওন দাবি করেন, নায়িকা মাহি তাঁর ভালো বন্ধু ছিলেন। ফেসবুকে মাহির সঙ্গে অনেক ছবিও পোস্ট করেন তিনি।