ধর্ষণের নমুনা নেই, মেলামেশা হলে সম্মতিতে
বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপির দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় পুলিশ ধর্ষণের কোনো নমুনা পায়নি। তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হ্যাপির দাবি অনুযায়ী, রুবেলের বাসা থেকে ধর্ষণের জব্দকৃত আলামত হিসেবে রুবেলের পরিহিত জার্সি, পাপোস এবং নাইটিতে কোনো প্রকার বীর্য পাওয়া যায়নি মর্মে রাসায়নিক পরীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক হালিমা খাতুন চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেন, ‘মামলাটি তদন্তের জন্য অত্র বিভাগে হস্তান্তর হইলে আমি পুলিশ পরিদর্শক হালিমা খাতুন এর পরবর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হই। তদন্তভার পাইয়া মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। আমার পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজের দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখকৃত ৯১০ অঙ্কনকৃত খসড়া ম্যাপ ও সূচিপত্র হুবহু মিল পাই। পরে বাদী নাজনীন আক্তার হ্যাপির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। তাহার উপস্থাপনকৃত সাক্ষীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জব্দকৃত আলামত রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়।’
‘তদন্তকালে জানা যায়, বাদী নাজনীন আক্তার একজন চিত্রনায়িকা ও মডেল। তাহার বাবা ইউসুফ আলী পূর্বে সেনাবাহিনীতে সিভিল চাকরি করতেন। আসামি রুবেল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় এবং নিজ বাড়ি বাগেরহাট জেলায়। দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাধিকবার সুনামের সাথে ক্রিকেট খেলে দেশে-বিদেশে তাঁর অনেক বন্ধু-বান্ধব, ভক্ত, অনুরাগী গড়ে ওঠে।’
‘বাদী নাজনীন আক্তার হ্যাপিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফেসবুক চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে রুবেলের সাথে তার পরিচয় হয়। এবং রুবেলের সে ভক্ত বলে রুবেলকে জানালে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’
‘রুবেল যে বাসায় বসবাস করেন, সেই বাসার দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রুবেলের বাসায় শুধু নাজনীন আক্তার হ্যাপি নন, তাঁর বাসায় অসংখ্য ভক্ত, অনুরাগী, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে অনেকেই যাতায়াত করতেন। বাদী ভিকটিম হ্যাপিকে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হইলে তিন সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড জানান, সম্প্রতি হ্যাপির শরীরে কোথাও জোরপূর্বক ধর্ষণের চিহ্ন পাওয়া যায় নাই এবং তাহার বয়স ১৯ বছর।’
তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, বাদীর ‘মামলার বিবরণে বলা হয়, ১ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় রুবেল হোসেন নাজনীন আক্তার হ্যাপিকে বিবাহের প্রলোভন দেখাইয়া তাহার বাসায় ডাকিয়া নিয়া জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। কিন্তু তদন্তকালে জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে বিকেল ৫ ঘটিকায় রুবেল হোসেন মিরপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলেন। খেলা শেষে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে ট্রফি গ্রহণ করেন।’
‘আবার বিগত ৯ মাস পূর্ব হইতে বিভিন্ন সময় বাদীকে রুবেল বিভিন্ন প্রলোভন দেখাইয়া ধর্ষণ করিয়াছে বলে বাদী উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু তিনি ধর্ষণের পরপর থানায় অভিযোগ করেন নাই। সে সম্পর্কে বাদী কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নাই। উপরন্তু বাদী রুবেলের বাসা হইতে (শনাক্তকৃত আলামত) রুবেলের পরিহিত জার্সি, পাপোস এবং নাইটি উপস্থাপন করেন; যাহাতে রুবেলের বীর্য পাওয়া যাইবে বলিয়া দাবি করেন; তাহা আদালতের অনুমতিক্রমে রাসায়নিক পরীক্ষা করাইলে তাহাতে কোনো বীর্য পাওয়া যায় নাই মর্মে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেন।’
এতে আরো বলা হয়, ‘বাদী প্রাপ্তবয়স্ক, মিডিয়াতে কাজ করা সচেতন, আধুনিক একজন ব্যক্তি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও বিবাহ নামক সম্পর্ক ছাড়া তিনি যদি রুবেলের সাথে মেলামেশা করিয়া থাকেন, তাহলে সেটা তার সম্মতিসহ হইয়া থাকিতে পারে। কিন্তু ধর্ষণের সংজ্ঞানুযায়ী জোরপূর্বক বিবাহের প্রলোভন দিয়া তাহাকে ধর্ষণ করা হইয়াছে বলিয়া কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। শুধুমাত্র বাদী তাঁর মৌখিক জবানবন্দী ছাড়া আর কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নাই। উপরন্তু তাহাদের প্রেমের সম্পর্ক বিষয়েও তেমন জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাদী নাজনীন আক্তার হ্যাপি আসামি রুবেলের বিরুদ্ধে যে জোরপূর্বক ধর্ষণ করিয়াছে বলে অভিযোগ করিয়াছেন, তাহা সঠিক নয় মর্মে প্রাথমিক রিপোর্টে প্রমাণিত হইতেছে।’
‘সার্বিক তদন্ত, সাক্ষ্য, ডাক্তারি রিপোর্ট, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করিয়া দেখা যায় যে, বাদী কর্তৃক আসামি রুবেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয় মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় মিরপুর মডেল থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট তথ্যগত ভুল বলে ৪৬ তাং ২৯/০৩/১৫ ইং ধারা নারী নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারা দাখিল করিলাম। আসামি রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাহাকে অত্র মামলার দায় হইতে অব্যাহতিদানের প্রার্থনা জানাইলাম। বাদীকে মামলার ফলাফল জানাইলাম।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর মিরপুর মডেল থানায় ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি মো. রুবেল হোসেনের সাথে গত গত ১০ মাস পূর্বে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে গত আট মাস যাবৎ বিভিন্ন সময় আসামির বর্তমান বাসায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে বিয়ের কথা বললে বিভিন্ন টালবাহানা করে দিনাতিপাত করতে থাকেন রুবেল।সর্বশেষ গত বছরের ১ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় রুবেল হোসেন তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার বাসায় ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।