বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ নয়, আলোচনা হয়েছে
মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় করা মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ নয়, বরং তাঁর সঙ্গে মামলা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ‘আলোচনা’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার।
আজ রোববার বিকেল ৩টায় সিএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ-আলোচনাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ নেই।
ঢাকায় গোয়েন্দা কার্যালয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে দীর্ঘ সময় ধরে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করা নিয়ে গতকাল শনিবার সারাদিন নানা গুঞ্জন ও আলোচনার জন্ম হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে মানুষের কৌতূহল আর আলোচনা ছিল তুঙ্গে। এর মধ্যেই বিকেলে প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর ঢাকায় নিজের শ্বশুর বাসায় ফেরেন বাবুল আক্তার।
এ সময় পুলিশের এ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, বাদী হিসেবে মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্যই পুলিশ তাঁকে ডেকেছিল।
আজ রোববার মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার নতুন দুজন সম্পর্কে তথ্য দিতে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহারের সংবাদ সম্মেলনেও বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি উঠে আসে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘বাদীকেজিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, এটা বলতে আমি কখনো প্রস্তুত নই। বাদীর সঙ্গে মামলা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন সময় আলোচনা হতে পারে এবং হবে। একে জিজ্ঞাসাবাদ বলার কোনো সুযোগ নেই।’
বাদীর সঙ্গে এই ‘আলোচনার’ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ছিলেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান সিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আইও ছিলেন কি না, কে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে- এসব তথ্য মামলার তদন্তের স্বার্থে পরিপূর্ণভাবে জনসমক্ষে দেওয়ার সুযোগ নেই।’
সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার এ সময় আরো জানান, মিতু হত্যায় জড়িত সন্দেহে রাঙ্গুনিয়া থেকে আনোয়ার ও ওয়াসিম নামের দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যার জড়িত থাকার স্বীকার করেছে বলে জানান কমিশনার।
গত ৫ জুন মোটরসাইকেলে করে আসা তিন দুর্বৃত্ত এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে প্রথমে ছুরিকাঘাত ও পরে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। সেদিন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের বাসা থেকে ঠিক ৫০ গজ দূরে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সময় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার পর বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্তে নামে পুলিশ। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর মোটরসাইকেল আরোহী দুজনকে আটক করা হয়।
পুলিশ বলছে, হত্যাকারী শনাক্ত হয়েছে। খুব শিগগির অন্যরাও ধরা পড়বে।
তদন্তের এই পর্যায়ে মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তারকে শুক্রবার রাতে তাঁর শ্বশুরের বাসা থেকে নিয়ে যায় রাজধানীর খিলগাঁও থানা পুলিশ।
বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন জানান, আইজির সঙ্গে দেখা করার কথা বলে তাঁর মেয়ের জামাইকে নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে দুপুরে ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুল আক্তারকে ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মিতু হত্যার ঘটনা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের দায়িত্বে ছিলেন বাবুল আক্তার। সম্প্রতি এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে আসেন। ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন তিনি।
বাবুল ও মিতু দম্পতির সাত বছর বয়সী এক ছেলে এবং চার বছরের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে।