মিতুকে গুলি করে ওয়াসিম, রেকিতে ছিল আনোয়ার
পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে যে মোটরসাইকেল আরোহী গুলি করেছে, তাঁকে ধরা গেছে বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সেই আরোহীর নাম ওয়াসিম। বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়।
আর ওই সময় ঘটনাস্থলের পাশে রেকির দায়িত্বে যারা ছিল তাদের মধ্যে একজন আনোয়ার। তার বাড়িও একই এলাকায়। তাকেও আটক করা হয়েছে বলে দাবি সিএমপির।
আজ রোববার এ দুজনকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বিকেলে সিএমপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন কমিশনার ইকবাল বাহার।
গতকাল শনিবার রাতেই ওয়াসিম ও আনোয়ারকে আটক করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এ সময় বন্দরনগরীর চাঞ্চল্যকর এ মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে দীর্ঘ সময় ধরে ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ ব্যাপারেও কথা বলেন কমিশনার।
ইকবাল বাহার মিতু হত্যার ঘটনাকে ‘টার্গেট কিলিং’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ওয়াসিম ও আনোয়ার পেশাদার খুনি। আমরা জানতে পেরেছি, সাত থেকে আটজন এ হত্যাকাণ্ডের মিশনে জড়িত ছিল। তার মধ্যে আমরা এই দুজনকে ধরতে পেরেছি। আদালতে তারা জবানবন্দি দিচ্ছে। এ ঘটনায় বাকি যারা জড়িত তাদের নাম-ঠিকানা আমরা পাব।’
আটকদের পরিচয় দিতে গিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দিন মোটরসাইকেলে যে তিনজন ছিল, তাদের একজন হলো ওয়াসিম। সে শুট করেছে।’
‘আর আনোয়ার রেকির দায়িত্বে ছিল, অর্থ্যাৎ রেসকিউ করার প্রয়োজন হলে যারা কাজ করবে তাদের একজন’, যোগ করেন ইকবাল বাহার।
এর আগে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ এলাকা থেকে আবু নসর গুন্নো নামে একজন এবং পরে নগরীর বায়েজিদ থানার শীতলঝর্ণা এলাকা থেকে শাহজামান রবিন নামে আরো একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১১ জুন সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার জানিয়েছিলেন, শাহজামান রবিন ঘটনার ‘মূল আসামি’ হতে পারে বলেও ধারণা করছে পুলিশ। আর আবু নসর গুন্নোকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কর্মী হিসেবে। এ দুজনকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
তবে আজকের সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘আগে যাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, সেটি আলাদা বিষয়।’
এ সময় মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় করা মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ নয়, বরং তাঁর সঙ্গে মামলা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ‘আলোচনা’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।
গত ৫ জুন মোটরসাইকেলে করে আসা তিন দুর্বৃত্ত এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে প্রথমে ছুরিকাঘাত ও পরে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। সেদিন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের বাসা থেকে ঠিক ৫০ গজ দূরে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সময় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার পর বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্তে নামে পুলিশ। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর মোটরসাইকেল আরোহী দুজনকে আটক করা হয়।
পুলিশ বলছে, হত্যাকারী শনাক্ত হয়েছে। খুব শিগগির অন্যরাও ধরা পড়বে।
তদন্তের এই পর্যায়ে মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তারকে শুক্রবার রাতে তাঁর শ্বশুরের বাসা থেকে নিয়ে যায় রাজধানীর খিলগাঁও থানা পুলিশ।
বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন জানান, আইজির সঙ্গে দেখা করার কথা বলে তাঁর মেয়ের জামাইকে নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে দুপুরে ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুল আক্তারকে ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মিতু হত্যার ঘটনা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের দায়িত্বে ছিলেন বাবুল আক্তার। সম্প্রতি এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে আসেন। ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন তিনি।
বাবুল ও মিতু দম্পতির সাত বছর বয়সী এক ছেলে এবং চার বছরের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে।