চিন্তার সময় চেয়েছেন কামারুজ্জামান
প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, তা চিন্তা করার জন্য সময় চেয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে দেখা করে এ কথা জানান তাঁর আইনজীবীরা।
কামারুজ্জামানের পাঁচজন আইনজীবী আজ সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করেন। বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে তাঁরা বের হয়ে আসেন।
আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘কামারুজ্জামান শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। তিনি দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন এবং দোয়া চেয়েছেন। তিনি আমাদের কাছে আইনের বিধিবিধানগুলো জানতে চেয়েছেন।
আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাঁকে বিধিবিধানগুলো জানিয়েছি। সে সঙ্গে অন্যান্য মামলার নজির উপস্থাপন করেছি।’
প্রাণভিক্ষার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, ‘প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, সে বিষয়ে তিনি ভাবনা-চিন্তার সময় চেয়েছেন। ভাবনা-চিন্তা করে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। এটা একান্তই তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।’
ভাবনা-চিন্তার জন্য তিনি কত সময় চাইবেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কামারুজ্জামানের আইনজীবী বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী তিনি সাতদিন সময় পাবেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি চিন্তাভাবনা করবেন, তার পর যৌক্তিক ও যথাযথ সময়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি যদি আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবারো আমাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।’
কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া অন্য আইনজীবীরা হলেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, মতিউর রহমান আকন্দ, আসাদ উদ্দীন ও মুজিবুর রহমান।
গতকাল বুধবার বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে একটি মাইক্রোবাসে করে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবউজ্জামানসহ পাঁচ কর্মকর্তা। এর আগে বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে রায়ের অনুলিপি পৌঁছে দেন। ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবউজ্জামান তা গ্রহণ করেন।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার যাবতীয় প্রস্তুতি গত সোমবারই (৬ এপ্রিল) নিয়ে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এদিন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।