বৃহত্তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া
প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। ১৮২৮ সালে প্রথম জামাতের পর এবারেরটি হবে মাঠের ১৮৯তম ঈদ জামাত। ঈদের জামাত পরিচালনা করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে মাঠ ভিজে যাওয়াসহ স্থানে স্থানে পানি জমে যাওয়ায় কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানে আশাবাদী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটি ও জেলা প্রশাসন।
এদিকে, সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এক প্রস্তুতি সভা হয়। জামাতে মুসল্লিদের জায়নামাজ ছাড়া ছাতা, ব্যাগসহ সবকিছু বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিরাপদে জামাত অনুষ্ঠানের জন্য চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি মাঠের প্রতিটি প্রবেশপথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডিসির সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান, পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন খান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া, কিশোরগঞ্জ ইমাম-উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার শাহ, গোপীনাথ জিউর আখড়ার সভাপতি মানিক রঞ্জন দে প্রমুখ।
ডিসির ভাষ্য
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের ডিসি আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে এবারও উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সুষ্ঠুভাবে রথযাত্রা সম্পন্নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জামাত এবং একই সঙ্গে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এসপির ভাষ্য
কিশোরগঞ্জের এসপি আনোয়ার হোসেন খান জানান, গৃহীত ব্যবস্থার কারণে বরাবরের মতো এবারও লাখো মুসল্লি নিরাপদে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এ ছাড়া উৎসবমুখর পরিবেশে আজকের রথযাত্রা অনুষ্ঠানেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, নিরাপদে জামাত অনুষ্ঠানের জন্য চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঈদের দিন মাঠ ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন থাকবে সহস্রাধিক পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক র্যাব ও আর্মড পুলিশ। মাঠের প্রতিটি প্রবেশপথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে আগত মুসল্লিদের। নাশকতা মোকাবিলায় ওয়াচ টাওয়ার এবং ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দ্বারা প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিবেচনায় এরই মধ্যে জেলায় বাতিল করা হয়েছে পুলিশের ছুটি।
সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে পৌরসভা, জনস্বাস্থ্য, গণপূর্ত, পিডিবিসহ অন্যান্য বিভাগের সহায়তায় গ্রহণ করা প্রস্তুতিমূলক কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। এর অংশ হিসেবে সম্পন্ন হয়েছে কাতারের লাইন টানা, মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকরণ, পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রঙের প্রলেপ দেওয়ার কাজ।
শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের ইতিহাস
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি। প্রতি কাতারে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি নামাজে অংশ নিয়ে থাকেন। সে সঙ্গে মাঠের বাইরে আশপাশের বিরাট এলাকাজুড়ে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা মিলিয়ে জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লির সংখ্যা আড়াই থেকে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায় বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
বাড়ছে মুসল্লি
মাঠের ঐতিহ্য ও সুনামের কারণে প্রতিবছরই মুসল্লির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। জামাতে অংশগ্রহণের জন্য ঈদের দুই-তিন দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিদের আগমন শুরু হয়।
আগত মুসুল্লিরা ঈদগাহ মসজিদ, গেস্টহাউস, এমনকি ঈদগাহর খোলা মাঠে রাত যাপন করে থাকেন। দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে অনেক ভিনদেশি মুসল্লিও অংশ নিয়ে থাকেন।
শোলাকিয়া মাঠ জামে মসজিদের ইমাম লুৎফুর রহমান গোলাপ বলেন, লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে বিশাল জামাতে দোয়া কবুল হয়—এ বিশ্বাসের কারণেই মুসল্লিরা দূর-দূরান্ত থেকে এই মাঠে ছুটে আসেন।
এবারের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। জামাতে শরিক হওয়া বিপুলসংখ্যক মুসল্লির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নামাজ শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিট আগে একটি শটগানের গুলি ছোড়া হবে।