গুলশান হামলার মামলায় যা বলা হয়েছে
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোঁরা হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে নিহত ছয়জনের নামসহ অজ্ঞাত আরো অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তবে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন (ফরোয়াডিং) করা হয়নি।
আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে দুপুরে গুলশান থানা হতে এ মামলার এজাহার ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারা মোতাবেক এফআইআর (ফাস্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) পাঠানো হয়।
এফআইআরে মামলা নম্বর, জিআর নম্বর, থানা হতে এজাহার পাঠানোর সময়, ঘটনার সময়, মামলা করার সময়, ঘটনার তারিখ, থানা হতে ঘটনাস্থলের দূরত্ব, বাদীর নাম ও ঠিকানা, কে তদন্ত করবেন তাঁর নাম, মামলার ধারা, জব্দকৃত মালামাল ও আসামিদের নাম, ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গুলশান থানার জেনারেল রেকর্ডিং অফিসার (জিআরও) উপপরিদর্শক ফরিদ মিয়া বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে জানান।
জিআরও জানান, এ মামলার এজাহার ও এফআইআর আদালতে এসে পৌঁছালে তা ঢাকার মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তীর আদালতে উপস্থাপন করা হয়। পরে বিচারক আগামী ২৪ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন নির্ধারণ করেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এ মামলার এজাহারে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাকিদের অজ্ঞাত আসামি বলা হয়েছে।
যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেন- জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিব্রাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও সাইফুল ইসলাম চৌকিদার।
এদিকে মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ছয়জনের মধ্যে প্রথম পাঁচজন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য এবং সাইফুল ইসলাম ওই রেস্তোরাঁর কর্মী হলেও হামলাকারীদের সহায়তা করেছিলেন।
গত ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর সেকশনের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে তারা দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে রাখে। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে রাতেই নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান এবং গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম। এ ছাড়া এ সময় আহত হন অর্ধশতাধিক পুলিশের সদস্য।
পরের দিন ২ জুলাই সকালে জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। অভিযান শেষে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে গত শুক্রবার রাতেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযানে সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয়।
নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব ছিল।
মধ্য প্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএম) এ হামলার দায় স্বীকার করে বলে দাবি করে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স। প্রতিষ্ঠানটি আইএসের বার্তা সংস্থা ‘আমাকের’ বরাত দিয়ে পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করে দাবি করে, এরাই গুলশান হামলায় অংশ নেয়।
গুলশানের অভিযান শেষে পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করে দাবি করা হয়, এরাই হামলাকারী। তবে সেই পাঁচজনের মধ্যে থাকা একজন সাইফুল, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পাচক হিসেবে কাজ করতেন বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। পুলিশের সবরবাহ করা ছবিতেও দেখা যায়, নিহত সাইফুল পাচকের সাদা পোশাক পরা অবস্থায় আছেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সাইফুল দ্বিতীয়। তাঁর ছোট ভাই বিল্লাল মালয়েশিয়ায় থাকেন। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১০ বছর সাইফুল জার্মানি ছিলেন। তারপর দেশে ফিরে দেড় বছর আগে হলি আর্টিজান বেকারিতে পিৎজা তৈরির কুক হিসেবে কাজ নেন সাইফুল।
এ মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, জীবিত বা জিম্মি দশা থেকে যাঁরা মুক্তি পেয়েছেন, তাঁরাও এ ঘটনায় জড়িত কি না, তাও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় মোট ৩২ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজন গাড়িচালক ও একজন আনসার সদস্য ছাড়া বাকি সবাই পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও সদস্য।
এজাহারে বলা হয়, অভিযানে জিম্মি দশা থেকে ৩২ জনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে জিম্মি উদ্ধার অভিযানের আগে ১৯ জন এবং পরে ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া লোকজনের মধ্যে দুজন করে ইতালি ও শ্রীলঙ্কার, একজন জাপানি এবং বাকিরা রেস্তোরাঁর এ দেশীয় কর্মী ও খদ্দের।
আগামী ২৪ আগস্ট এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।