‘তোমরা ঈদ কর, আমার ডিউটি আছে’
‘রুনা, মা ও অন্য ভাইবোনদের নিয়ে তোমরা ভালোমতো ঈদ কর। আমার জরুরি ডিউটি আছে। ছুটি নেই। আসতে পারব না।’
আজ বৃহস্পতিবার ঈদের দিন সকালেই পুলিশ কনস্টেবল আনসারুল হক তাঁর বড় ভাই নাজমুল হককে ফোনে এ কথা জানান। তখন বাজে সকাল সাড়ে ৭টা। এরপর আর কথা হয়নি।
কাঁদতে কাঁদতে নাজমুল জানালেন, এর কিছু সময় পরই ফোন আসে। প্রথমে জানানো হয় আনসারুলের আহত হওয়ার খবর। পরে জানানো হয়, আনসারুল আর নেই।
সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন কনস্টেবল আনসারুল হক। দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন তিনি।
আনসারুলের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে। আজই জানাজা শেষে রাত ৯টার দিকে নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন হয়েছে আনসারুলের লাশ।
পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে আনসারুল তৃতীয়। তিয়শ্রী এনএইচখান একাডেমি থেকে ২০০৩ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০০৬ সালে আনসারুল পুলিশে যোগ দেন।
আনসারুলের প্রতিবেশী মৌলা মিয়া জানান, আট বছর আগে পাছহাট গ্রামের রুনা আক্তারকে বিয়ে করেন আনসারুল। তবে ওই দম্পতির কোনো সন্তান নেই।
আনসারুলের মৃত্যু সংবাদ পৌঁছানোর পর বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন তাঁর বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী রুনা।
নাজমুল হক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ভাই আর কোনোদিনই আসবে না। আর কথা বলবে না। জঙ্গিরা সব কেড়ে নিল। রুনা ও বৃদ্ধ মাকে কী বোঝাব?’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সোহেল মিয়া বলেন, ‘পরিবারটি তেমন স্বচ্ছল নয়। পাঁচ বছর আগে আনসারুলের ভাইদের মধ্যে সবার বড়ভাই আতিকুর রহমান মারা যান। বড় ভাই মারা যাওয়ার পর আনসারুলের আয়ের ওপর অনেকটা নির্ভর ছিল সংসারটি।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান এম,এ হারেছ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ শাহরিয়ারসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও গ্রামের বাসিন্দারা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
নেত্রকোনা পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জানান, যথাযোগ্য মর্যাদায় পুলিশ সদস্য আনসারুলকে দাফন করা হয়েছে।