নারী প্রার্থীদের জন্য ‘ঘরে বন্দী করার প্রতীক’!
দেশের তিন সিটি করপোরেশনে চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। এরই মধ্যে যেহেতু প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়ে গেছে, তাই মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
হাতি, মাছ, ঘড়ি, কমলালেবু, ক্রিকেট ব্যাট, চরকা, টেলিস্কোপ, ডিস এন্টেনা, বাস, ময়ূর, আংটি, ঈগল, ল্যাপটপ, শার্ট, হেডফোন, স্ট্রবেরি, ঝুড়ি, ট্রাক্টর, ঘুড়ি, ঘোড়া কী নেই এই প্রতীকের তালিকায়।
মজার ব্যাপার হলো এসবই হলো পুরুষ প্রার্থীদের জন্য। সংরক্ষিত আসনের নারী প্রার্থীদের জন্য যেসব প্রতীক রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কেটলি, গ্লাস, পানপাতা, বৈয়ম, মোড়া, শিল পাটা, ঝুমঝুমি, দোলনা, প্রেসার কুকার, ভ্যানিটি ব্যাগ, ফ্রাই প্যানের মতো সামগ্রী।
এমন ‘ঘরোয়া’ প্রতীক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। আজ সোমবার ঢাকা উত্তরের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী প্রকৌশলী সম্পা বসু বলেন, ‘ঘর থেকে বের হয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি। যে প্রতীকগুলো দিয়েছেন তা তো ঘরে বন্দী করারই প্রতীক হয়ে গেল। নির্বাচন কমিশন কি এই চিন্তাই করছেন না যে নারীরা শুধু ঘরের কাজেই যুক্ত থাকবেন? প্রতীকগুলোর মধ্য দিয়ে কিন্তু সেই চিন্তাটারই প্রতিফলন ঘটে।’
নারীদের জন্য বরাদ্দ প্রতীকগুলো নিয়ে বেশ অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা। এগুলোকে নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধা বলেও মনে করেন অনেকে।
তবে এসব প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। সব প্রশ্নের সঙ্গে সার্বিকভাবে উত্তর দেন তিনি। সিইসি বলেন, ‘আজকে অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব এসেছে। সবগুলো এবার বাস্তবায়ন করতে না পারলেও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো আমি স্তম্ভিত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বলি দেশে নারীর ক্ষমতায়ন অনেক দূর এগিয়েছে, নারীর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আসলে নারীর ক্ষমতায়নের যে ভাষা বা যে তাৎপর্য তা এই প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে খুবই নেতিবাচক হিসেবে উঠে এসেছে। ধরেই নেওয়া হয়েছে যে নারী ঘরোয়া, তাই গৃহস্থালির সামগ্রী তার জন্য প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
সাইকেল বা চাকা কেন নারীর জন্য প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হবে না, সে প্রশ্নও রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। বিষয়টিকে তিনি অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ও দুঃখজনক হিসেবেও আখ্যা দেন।
এ বিষয়ে বৃহত্তর নারী আন্দোলনের কর্মীরা প্রতিবাদ জানাবেন বলে আশা করেন রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আশা করি, মহিলা পরিষদ এর একটা জোরালো প্রতিবাদ করবে। এটা একটা প্রথা যা তারা (নির্বাচন কমিশন) আগের মতোই রেখেছে। রাষ্ট্রীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার সঙ্গেও এই প্রতীক বরাদ্দ সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’