‘আমাদের এখন কে দেখবে?’
বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। বোনটিরও একমাত্র ভাই। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বিবিএতে। লক্ষ্য ছিল বড় কিছু করার। বাবা-মা-বোনকে নিয়ে তাঁরও স্বপ্ন ছিল অনেক। বোন মিমির চোখের পানি থামছে না, কেবলই বলে যাচ্ছে সে, ‘আমাদের এখন কে দেখবে?’ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মিমির ভাই মোহাম্মদ জাকারিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
জাকারিয়া হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দিনাজপুর শহরে বড় গুড়গোলা এলাকায় জাকারিয়াদের বাসা। আর ওই বাসায় কেবলই শোকের মাতম।
জাকারিয়ার বাবা গোলাম মোস্তফা মোস্তাক পেশায় একজন দর্জি। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বিমর্ষ ও স্তব্ধ হয়ে আছেন গতকাল থেকে। বাকরুদ্ধ গোলাম মোস্তফা বাড়িতে লোকজনের আসা-যাওয়া দেখছিলেন। জাকারিয়ার মৃত্যুর সংবাদে এলাকার লোকজন বাড়িতে এসে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে কথা বললেন গোলাম মোস্তফা। ‘আমি বিচার চাই। দায়ী ব্যক্তিদের ফাঁসি চাই। আমার ছেলেসহ অন্য যাদের মারা হয়েছে তাদের হত্যার বিচারও চাই।’ আর কিছু বলতে পারলেন না গোলাম মোস্তফা।
বাড়িটিতে লোকজনের আনাগোনা বাড়ছিল। পড়শি আর স্বজনরা সবাই নীরবে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছেন জাকারিয়ার পরিবারকে। কিন্তু জাকারিয়ার মায়ের বিলাপ কিছুতেই থামছিল না। তিনি একনাগাড়ে বলে যাচ্ছেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। আমার ছেলের কোনো অপরাধ ছিল না। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
জাকারিয়ার বোন মিমি আক্তারের কান্না থামছে না। গলায় আফসোসের সুর, ‘ভাইকে হাসপাতালে নিতে দেয়নি। হাসপাতালে সময়মতো নিলে ভাইকে বাঁচানো যেত।’ একটা কথা মিমি বারবার বলছিল, ‘আমার একমাত্র ভাই ছিল। আমাকে এখন কে দেখবে? আমাদেরকে কে দেখবে?’
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের হল দখলকে কেন্দ্র করে জাকারিয়া ও মিল্টন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। মিল্টন ভেটেরিনারি অনুষদের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেকুজ্জামান জানান, নিহত দুই শিক্ষার্থীর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি জানান। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি বলে ওসি জানান।