দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সচল, চাপ নেই যানবাহনের
বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। এতে ভাঙনের কবলে পড়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা। ফলে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত নৌপথে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে থাকে। গত রোববার সকালে দৌলতদিয়ার সবকটি ঘাটই নদীতে বিলীন হয়ে গেলে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেরি চলাচল। গতকাল বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সচল হওয়ায় এই নৌপথে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়। কমে উভয় ঘাটে যানবাহনের চাপ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে ফেরি পারাপারে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘাট এলাকায় দিন কাটাচ্ছিলেন অপেক্ষমাণ ট্রাকের চালক ও সহকারীরা। রোদ-বৃষ্টি ও থাকা-খাওয়াসহ নানা কারণে তাঁরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। এরই মধ্যে দৌলতদিয়ার ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট মেরামত করে চলাচলের উপযোগী হলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পর্যায়ক্রমে ১২টি ফেরি চালু করা হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে ট্রাক পারাপার করা হলে এক রাতে ফাঁকা হয়ে যায় উভয় পাড়ের ঘাট এলাকা। ফেরি পারের সুযোগ পেয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন অনেক চালক ও সহকারী।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় থেকে জানা যায়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে চলাচল করতে সচল ও বিকল মিলে রয়েছে নয়টি রো রো (বড়), ছয়টি ইউটিলিটি (মাঝারি) ও তিনটি (কে-টাইপ) ফেরি। সপ্তাহখানেক আগে নদীতে পানি বেড়ে গিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। এতে ভাঙনের মুখে পড়ে ঘাট এলাকা। কয়েক দিন আগেও এই স্রোতে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে ফেরি চলতে হয়েছে। অনেক ফেরিই স্রোতের প্রতিকূলে চলাচল করতে না পেরে বসিয়ে রাখা হয়। আবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় কয়েকটি ফেরির। এ অবস্থায় কিছুদিন ধরেই তীব্র স্রোতে সচল ফেরিগুলো দিয়ে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছিল। এ কারণে উভয় পাড়ের ঘাট এলাকায় যানবাহনের চাপ পড়ে।
গত রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে দৌলতদিয়ার সবকটি ঘাট নদীভাঙনের কবলে পড়ে। এ কারণে এই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দিন দুপুর দেড়টার দিকে দৌলতদিয়ার ৩ নম্বর ঘাট কিছুটা মেরামত করে শুধু ছোট ফেরি চলাচল শুরু করা হয়। এর পর দৌলতদিয়ার ২, ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট মেরামত করে মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে ইউটিলিটি রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, কে-টাইপ কুমারী ও কপোতী ফেরি চলাচল শুরু করে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান জানান, মঙ্গলবার রাতে ঘাট মেরামত হয়। দৌলতদিয়ার ২ নম্বর ঘাটে স্রোত বেশি থাকায় ছোট ও মাঝারি ফেরি ভিড়তে পারেনি। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটে ভিড়ে হালকা যানবাহন ওঠানামা করছিল এসব ফেরি। পরে ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট বড় ফেরি চলাচলের উপযোগী করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে পরীক্ষামূলকভাবে পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই করে রো রো (বড়) ফেরি কেরামত আলী, এনায়েতপুরী ও শাহজালাল ছেড়ে গিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড়তে সক্ষম হয়। এর পর থেকে অন্যান্য ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহীউদ্দিন রাসেল জানান, দৌলতদিয়ার ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে ছয়টি রো রো, চারটি ইউটিলিটি (মাঝারি) ও দুটি কে-টাইপ (ছোট) ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। গত রাতে ফেরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উভয় পাড়ের ঘাটে আটকে পড়া ট্রাক পারাপার করা হয়েছে।
মহীউদ্দিন রাসেল আরো জানান, আজ শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত ঘাট এলাকা প্রায় যানবাহন শূন্য ছিল। ঘাটে কোনো যানবাহন আসার সঙ্গে সঙ্গে ফেরি পারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।