মেগাসিটির অঙ্গীকারে চট্টগ্রামে আ জ ম নাছিরের ইশতেহার
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতাকে দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন। ৩০ পৃষ্ঠার এক বিশাল বিবরণে সর্বাঙ্গিকভাবে চট্টগ্রামকে মেগাসিটি করে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
বুধবার সকালে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ সংগঠনের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কেবল নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন নয়, সঙ্গে গুরুত্ব পেয়েছে পাহাড় রক্ষা ও বনায়ন, সে সঙ্গে উন্নয়ন ও সেবার সামগ্রিক নিশ্চয়তা।
ইশতেহারে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কয়েকটি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। এ কারণেই তাঁর অঙ্গীকার চট্টগ্রামবাসীকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করা। এ জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন, খালের মুখে স্লুইসগেট স্থাপন, বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খননসহ পরিকল্পিতভাবে নানা কাজের উদ্যোগের কথা জানান।
পাহাড় রক্ষা করতে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, বৃক্ষনিধন বন্ধ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি জোরদারের কথা জানান আ জ ম নাছির। কর্ণফুলী নদীর তীরে অপরিকল্পিতভাবে শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠায় নদীর দূষণ বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ইশতেহারে বলা হয়, ঐতিহ্যবাহী কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করতে সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদী সুপেয় পানির উৎস হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে নিয়ে কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের কাজ এগিয়ে নিলে পুরো দেশ লাভবান হবে।
শিক্ষার প্রসারে সিটি করপোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। এ ছাড়া নতুন স্থায়ী ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হবে বহুতল ভবন। নিম্নবিত্ত ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ ছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ, আইটি প্রশিক্ষণ, খেলাধুলা প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা বিভাগের ওপর জোর দেওয়া হবে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে অধ্যয়ন ও বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
৪১টি ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, বিনামূল্যে চিকিৎসকদের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা হবে। মেমন মাতৃসদন হাসপাতালকে ৩০০ বেডে উন্নীত করা হবে। বস্তি এলাকার মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা শহরের প্রধান রূপ উল্লেখ করে আ জ ম নাছির বলেন, নগরবাসীকে বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে শহরটিকে পরিচ্ছন্ন হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পরিচালনার পাশাপাশি পুরো শহরকে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। সিটি করপোরেশনকে ই-গভর্ন্যান্স স্কিমের আওতায় এনে চলমান অটোমেশন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ই-হেলথ, ই-সেবা চালুর ব্যবস্থা করা হবে।
যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করতে সড়ক প্রশস্তকরণ, পর্যাপ্ত ফুটপাতের ব্যবস্থা, ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করে চট্টগ্রামকে প্রকৃত অর্থে মেগাসিটির মানে উন্নীত করার ব্যবস্থা করা হবে। যানজট নিরসন, যাত্রী ছাউনি, ওভারব্রিজ নির্মাণ, আন্তসিটি সার্ভিস চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনী ইশতেহারে নগরবাসীর জন্য আবাসন সংকট নিরসন, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ক্রীড়া ও বিনোদন ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে নানা উদ্যোগ, পথচারীদের জন্য টয়লেট উন্নয়ন, ভিক্ষাবৃত্তির বিমোচন, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ, আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ, শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকট নিরসনে উদ্যোগ, শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তোলাসহ সবার পরামর্শে একটি আদর্শ নগর গড়ে তোলার কথা বলা হয় ইশতেহারে।