‘তিন মাসের মধ্যে ২১ আগস্ট হামলা মামলার রায়’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার এখন শেষ পর্যায়ে। জাতি দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই মামলার রায় তিন মাসের মধ্যে দেখতে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারি কৌঁসুলি এ কথা জানান।
এই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল আজ বুধবার বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, ‘দুজন তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) জেরা সম্পন্ন হলেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেওয়া হবে এবং এ জন্য প্রয়োজন দুই থেকে তিন মাস।’
৪৯১ জনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ২২৪ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্পন্ন হওয়ায় তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তবে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান।
সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুলাই ২১ আগস্ট মামলার প্রথম অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এর একটি হয় হত্যার জন্য এবং অপরটি হয় বিস্ফোরক আইনের অধীন।
অভিযোগপত্রে ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং ২১ জন হুজি নেতাকর্মী।
এরপর ২০১২ সালের ৩ জুলাই অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করে এবং ৩০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ নিয়ে অভিযোগপত্রে এ মামলায় অভিযুক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে।
২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষার জন্য ভুল পথে তদন্ত করে। তৎকালীন সিআইডি কর্মকর্তারা তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায়। এ সব ঘটনা পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এ মামলা নতুন করে তদন্তে উদ্বুদ্ধ করে।
সরকারি কৌঁসুলি কাজল বলেন, অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত ৫২ জনের মধ্যে ১৯ জন পলাতক, আটজন জামিনে রয়েছে এবং বাকিরা বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান কারাগারে রয়েছেন।
এই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডির সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডির সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছেন।
পলাতকদের মধ্যে তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ কলকাতা, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আমেরিকায়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন ও তার ভাই মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের একটি কারগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়।
জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও মওলানা লিটন ওরফ জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ডিএমপির তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ও ডেপুটি কমিমনার (দক্ষিণ) মো. ওবায়দুর রহমান এবং খান সৈয়দ হাসানও বিদেশে অবস্থান করছে। সূত্র জানায়, এদের অধিকাংশই রয়েছে পাকিস্তানে।
তবে সাবেক অভিযুক্ত হারিছ চৌধুরীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পলাকতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু আটক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই।