ক্রিকেটার শাহাদাতের পক্ষেই সাক্ষ্য দিল গৃহকর্মী হ্যাপি
নির্যাতনের মামলায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন জাহান নৃত্যর পক্ষেই আদালতে সাক্ষী দিল গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপি।
আজ বুধবার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তানজিলা ইসমাইলের আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেয় হ্যাপি।
আদালতে হ্যাপি বলে, ‘শাহাদাত আমাকে খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়নি। আমি মানুষের পরামর্শে এ মামলা করেছি।’
‘আমি শাহাদাতের বাসায় কাজ করতাম। প্রায় সাত মাস কাজ করেছি। কাজ করতে আমার ভালো লাগত না। শাহাদাতের বউ আমাকে প্রায়ই বকাঝকা করত। হঠাৎ করে দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যায়। এ জন্য আমি চিকিৎসা নিই।’
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ কৌঁসুলি আলী আজগর স্বপন সাংবাদিকদের জানান, হ্যাপির সাক্ষ্যকে বৈরী (রাষ্ট্রের বিপক্ষে সাক্ষ্য) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে জেরা করা হয়েছে। বিচারক আগামী ৩১ আগস্ট এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
আলী আজগর আরো জানান, গত ১৭ আগস্ট এ মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী সাক্ষ্য দেন। তিনি মামলার পর হ্যাপির জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন। সেই জবানবন্দি তিনি আদালতে প্রদর্শনী হিসেবে দেখিয়েছেন। হ্যাপি ওই জবাবন্দি সুস্থ মস্তিষ্কে ও বিনা প্ররোচনায় দিয়েছিল।
এ মামলায় হাজিরা দিতে আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন শাহাদাত হোসেন ও তাঁর স্ত্রী নৃত্য।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট তানজিনা ইসমাইলের আদালতে ২২ ধারায় দেওয়া হ্যাপির জবানবন্দি রেকর্ড করার কাগজ উপস্থাপন করেন ঢাকা মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সে জবানবন্দি রেকর্ড করেন স্নিগ্ধা।
জবানবন্দিতে হ্যাপি বলে, ‘শাহাদাত হোসেনের বউ কাঠের খুন্তিতে গরম তেল নিয়ে আমার হাঁটুতে ছ্যাঁকা দেয়। একদিন রাতে আমি বাচ্চার সুজি রান্না করছিলাম। দেরি হয়েছে বলে শাহাদাত ও তাঁর বউ আমাকে মারতে শুরু করে। শাহাদাতও বেলন নিয়ে এসে আমাকে মারধর করে। আমার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে বেলন লাটির একটি অংশ লেগে গর্ত হয়, রক্ত বের হয়। এতে তারা মারা থামায়। ক্ষততে ন্যাকড়া বেঁধে আমি কাজ করি। ওই রাতে আমি ভয়ে তাদের কথামতো ঘরের সব কাজ করি।’
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় ক্রিকেটার শাহাদাত তাঁর বাসার গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে জিডি করেন। এর পর একই দিন রাত ৮টার দিকে মিরপুরের পল্লবী এলাকা থেকে হ্যাপিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এরপর হ্যাপিকে মিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হ্যাপি অভিযোগ করে, শাহাদাতের বাসায় তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হতো।
পরে পুলিশ হ্যাপিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে। একই সঙ্গে সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হক শিশু নির্যাতনের অভিযোগে শাহাদাতের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।