স্ত্রী এগিয়ে যাওয়ায় প্রাণে রক্ষা
স্বামী চিত্তরঞ্জন আঢ্যকে চাপাতি দিয়ে কোপাচ্ছিল দুই সন্ত্রাসী। স্বামীর চিৎকার শুনে এগিয়ে যান স্ত্রী চঞ্চলা রানী আঢ্য। সন্ত্রাসীরা তাঁকেও মারধর করে। এরপর আশপাশের আরো লোকজন এগিয়ে গেলে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
এই ঘটনায় চিত্তরঞ্জন গুরুতর জখম হলেও প্রাণে রক্ষা পান। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের পাশে নিজের মুদি দোকানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আর চিত্তরঞ্জন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি এখন কিছুটা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন বড় ভাই নিতাই চন্দ্র আঢ্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রঘুনাথপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ঢালের নিচে চিত্তরঞ্জন আঢ্যের একতলা বাড়ি। বাড়ির গেটের সঙ্গে তাঁর মুদি দোকান দ্বীপ স্টোর। দোকানের আরেক পাশে রঘুনাথপুর শ্রীশ্রী কালীমন্দির। দোকানের সামনে লোকজনের ভিড়। দোকানে নানা পণ্য। ভেতরে একটি চেয়ার রাখা। চেয়ারের নিচে মেঝেতে রক্তের দাগ।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রঘুনাথপুরে মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক আসে। তাদের মধ্যে দুই যুবক মুখোশ পরে মহাসড়কের পাশে চিত্তরঞ্জনের দোকানে যায়। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ধারালো চাপাতি দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ওই সময় তাঁর চিৎকারে স্ত্রী চঞ্চলা রানী আঢ্য ছুটে এসে দেখেন তাঁর স্বামীকে চেয়ারে বসা অবস্থায় একজন চাপাতি দিয়ে কোপাচ্ছে। এ সময় স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিনি। সন্ত্রাসীরা তাঁর চুলির মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে দেয়। দুজনের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
আহত চিত্তরঞ্জনকে প্রথমে পাঁচদোনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন। কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
আহত চিত্তরঞ্জনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র আঢ্য বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে দোকান থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে এগিয়ে যাই। এ সময় দেখি দুই সন্ত্রাসী আমার ভাইকে চাপাতি দিয়ে কোপাচ্ছে ও ভাইয়ের বৌকে মারধর করছে। রাস্তার ওপর একজন মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন আমি আমার ভাইকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। অবস্থা বেগতিক দেখে সন্ত্রাসীরা দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।’
আহত চিত্তরঞ্জন নিজের জমির ওপর একটি কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মন্দিরের পাশেই তিনি একটি মুদির দোকান করে সংসার চালাতেন। তাঁর একটি প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। সাধারণ ও নিরীহ চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে কারো কোন্দল না থাকলেও স্থানীয় এক যুবক চাঁদার জন্য বিরক্ত করছিল বলে অ্যাম্বুলেন্সে স্বজনদের জানান তিনি। হামলার সময় অপর এক যুবক ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিল। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে।
রঘুনাথপুরের হামলাস্থল পড়েছে মাধবদী থানা এলাকায়। হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস দাবি করেন, আহত ব্যক্তি কোনো মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক নয়। হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সাম্প্রতিককালে দেশব্যাপী সংঘটিত ঘটনার অংশ কি না তা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা কাজ শুরু করেছে বলে জানান ওসি।
তবে নরসিংদী শহর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিনয় সাহা জানিয়েছেন, আহত চিত্তরঞ্জন আঢ্য রঘুনাথপুর শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক। এই ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।