সারা দেশে পেট্রলপাম্পে ধর্মঘট পালিত
মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিল, ট্যাংকলরির ভাড়া বাড়ানোসহ ১২ দফা দাবিতে সারা দেশে প্রতীকী ধর্মঘট পালন করেছে পেট্রলপাম্প এবং ট্যাংকলরির মালিক ও শ্রমিকপক্ষ।
বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলে।
আমাদের ভৈরবের প্রতিনিধি মোস্তাফিজ আমিন জানান, ধর্মঘটের ফলে আজ সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের ভৈরবের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানির তেলের ডিপো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ ছিল।
ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ভৈরবের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ১২ দফা দাবি আদায়ে আজ ১০ ঘণ্টার প্রতীকী ধর্মঘট পালিত হয়েছে। যদি দাবি মানা না হয়, তবে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বরিশাল প্রতিনিধি আকতার ফারুক শাহিন জানান, বরিশালে ধর্মঘট পালন করেছেন পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরির মালিক ও শ্রমিকরা।
বরিশাল ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামাল হোসেন জানান, গতকাল শনিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর অংশ হিসেবে আজ সারা দেশের মতো বরিশাল অঞ্চলেও প্রতীকী ধর্মঘট পালন করা হয়েছে।
চাঁদপুর প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন, ধর্মঘটের ফলে চাঁদপুরে সকাল থেকে জেলার পেট্রলপাম্পগুলো থেকে জ্বালানি না পেয়ে ফিরে গেছে যানবাহনগুলো।
গাড়ির চালকরা জানান, আজ যে পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ধর্মঘট তা তাঁরা আগে থেকে জানতেন না।
শেরপুরের প্রতিনিধি কাকন রেজা জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পেট্রলপাম্প বন্ধ থাকায় জনদুর্ভোগ দেখা যায়।
ড্রিমল্যান্ড বাস সার্ভিসের কাউন্টার থেকে জানা যায়, রাতে যেসব গাড়ি ঢাকা ছেড়ে ভোরের দিকে শেরপুরে পৌঁছায়, সেসব গাড়িতে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এসব গাড়ির কোনো কোনোটির যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে।
পাবনা ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি এ বি এম ফজলুর রহমান জানান, সিরাজগঞ্জে উত্তরবঙ্গ ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের মালিকানাধীন একটি পেট্রলপাম্পে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের ভাঙচুরের প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছেন ট্যাংকলরি শ্রমিকরা। এতে বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ ছিল।
এ ছাড়া জেলার পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরির মালিক-শ্রমিকরা বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটের সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের খালকুলায় গত শুক্রবার ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের মালিকানাধীন একটি পেট্রলপাম্প উদ্বোধন করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন মিলনকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর সমর্থকরা অনুষ্ঠানস্থলে ভাঙচুর করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন ট্যাংকলরি শ্রমিকরা। পরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।
পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবিগুলো হলো- সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মাশুল অস্বাভাবিকভাবে বাড়োনোর সিদ্ধান্ত বাতিল; ২০০৮ সালের ১০ জুন শ্রম মন্ত্রণালয়ের এসআরও নং-১৪১ বাতিল করে ট্যাংকলরিকে পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুন এসআরও জারি করা; বাস্তবতার নিরিখে তেল বিক্রির কমিশন ও ট্যাংকলরির ভাড়া বাড়ানো; ট্যাংকলরি শ্রমিকদের পাঁচ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বিমা প্রথা প্রণয়ন; পরিচালন লোকসান, ইভাপোরেশন লস ও বিএসটিআই টলারেন্সের মাত্রা যৌক্তিক হারে নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষান্তে এটা পুনর্নির্ধারণ করা; ফেরিঘাটে ট্যাংকলরিকে পারাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া; ভেজাল রোধে বেসরকারি রিফাইনারি কর্তৃক বাজারে তেল বিক্রি বন্ধ করতে করা অথবা তাদের সরবরাহকৃত তেল বিক্রির অনুমতি দেওয়া; সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিদ্যমান ট্যাংকলরি টার্মিনাল সংস্কার ও প্রয়োজনীয় স্থানে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা; পেট্রলপাম্প স্থাপনের নীতিমালা পুনর্বিন্যাস করা; ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, পেট্রলপাম্প পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) টলারেন্স মাত্রার হার যাচাই করে এটা পুনর্নির্ধারণ না করা পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখা।