মৈত্রী এক্সপ্রেসে বিজিবির তল্লাশি, লুটের অভিযোগ
ভারত থেকে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে বিজিবি সদস্যরা তল্লাশির নামে যাত্রীদের মালামাল লুট করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশনে এ ঘটনা ঘটে।
তবে লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর ৪৭ বিজিবির নায়েব সুবেদার মো. হযরত আলী। তিনি দাবি করেন, তাঁরা ১১টি ব্যাগ জব্দ করেছেন। তাতে ভারতীয় অবৈধ শাড়ি ও কসমেটিক্স পাওয়া গেছে। ব্যাগগুলোর কোনো মালিক পাওয়া যায়নি।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফেরা যাত্রী আলাল জানান, তিনি ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে প্রিয়জনদের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কিছু পোশাক, কিছু কসমেটিক্স নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। ঈশ্বরদী স্টেশনে ট্রেনটি থামলে কুষ্টিয়ার মিরপুর ৪৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) সদস্যরা তাঁরসহ সব যাত্রীর ব্যাগ বগি থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। কেন নিচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে বন্দুক বুকে ধরে। এভাবে তাঁর দুটি ব্যাগ নিয়ে গেছে।
যাত্রী মনীশা বলেন, ‘পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। চিকিৎসা শেষে ওষুধপত্র ও সবার জন্য কিছু পোশাক ও কসমেটিক্স কিনেছিলাম। বিজিবির সদস্যরা আমাদের প্রেসক্রিপশনসহ ব্যাগগুলো নিয়ে যান।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিজিবি সদস্যরা তল্লাশির পর কয়েকজন যাত্রীর ১১টি ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় স্টেশনে উপস্থিত লোকজন তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। বিজিবির সদস্যরা বন্দুক তাক করে বাঁশি বাজিয়ে স্টেশনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেন। পরে ১৫ মিনিট পর ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে স্টেশন ছাড়ে।
ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, বিজিবির সদস্যরা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে তল্লাশি চালানোর সময় জিআরপি পুলিশের সহযোগিতা নেননি। আর যেসব ব্যাগ নিয়ে গেছে, সেগুলো খুলে কী কী মালামাল আছে তা দেখার দরকার ছিল। কিন্তু তাঁরা তা না করে বৈধ মালিকানার ব্যাগ ও মালামালও নিয়ে গেছে। এতে জিআরপি পুলিশের কিছু করার নেই।
ঈশ্বরদী স্টেশন মাস্টার মো. রফিজ উদ্দিন বলেন, ‘কলকাতা থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদী জংশনে আসার কয়েক মিনিট আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর-৪৭ বিজিবির নায়েব সুবেদার মো. হযরত আলী একটি লিখিত চিঠি আমার সামনে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ভারত থেকে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ মালামাল রয়েছে। তাই ট্রেনটি তল্লাশি করা হবে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই চিঠি গ্রহণ করা সম্ভব নয় বলে জানালে বিজিবির সদস্যরা আমার বুকে বন্দুক ধরে অশালীন আচরণ করেন।’
মৈত্রী এক্সপ্রেসের গার্ড কনক বিশ্বাস ও চালক জাহাঙ্গীর জানান, ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ২টা ৩৫ মিনিটে নিয়মানুসারে থামানো হয়। কিন্তু আকস্মিকভাবে বিজিবির সদস্যরা তাঁদের কক্ষে ঢুকে বুক বরাবর বন্দুক ধরে। জিজ্ঞেস করা হলে বিজিবির সদস্যরা চুপ থাকতে বলেন। তারপর দেখেন বগি থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে যাচ্ছেন। কিসের ব্যাগ নিয়ে গেছেন তা জানেন না। বিজিবির সদস্যদের আচরণ ডাকাতদের চেয়েও খারাপ ছিল বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
রেল ও ট্রেন কর্মকর্তাদের দিকে বন্দুক তাক করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজিবি কর্মকর্তা হযরত আলী।
যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা শওকত জামিল মোহসী জানান, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে বিজিবি সদস্যদের এভাবে তল্লাশির নামে যাত্রীদের হয়রানি এবং তাঁদের মালামাল নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ট্রেনে তল্লাশি চালাতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। বিজিবির সদস্যরা তা করেননি। তাই ভবিষ্যতে বিজিবির সদস্যরা যেন এইভাবে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে তল্লাশির নামে যাত্রীদের হয়রানি ও তাঁদের মালামাল না নিয়ে যান এবং আজ মঙ্গলবারে নিয়ে যাওয়া ব্যাগগুলো যেন ফেরত দেন সেই বিষয়ে রেলওয়ের পক্ষ থেকে ৪৭ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক (সিও) বরাবর অভিযোগ করা হবে।