শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিন
আজ মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন।
আজ থেকে ১২৯ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাঁদের আত্মদানের মধ্যদিয়েই শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এ দিনটিকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সরকারি ছুটি থাকে এ দিন। বাংলাদেশেও দিনটি সরকারি ছুটি।
এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’। দিবসটি উপলক্ষে সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের শ্রমজীবী মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের বিকল্প নেই : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব পরিবর্তনশীল এবং তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করাসহ বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে শিল্পোদ্যোক্তা, মালিক ও শ্রমিকের সম্মিলিত প্রয়াস একান্তভাবে কাম্য। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হব বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
সরকার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, তাঁর সরকার বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু করেছে। পোশাকশিল্পসহ ৩৮টি শিল্প খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতর মজুরি ঘোষণা করেছে। জাতীয় শিশু শ্রমনীতি ২০১০ এবং জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ প্রণয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আরেকদিকে শোষিত- আমি শোষিতের পক্ষে’। তিনি পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তাঁর সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”
মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের বিজয় : রওশন এরশাদ
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি মহান মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক বাণীতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ আরো বলেন, মে দিবসে বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের বিজয়, আনন্দ-উৎসবের এবং নতুন সংগ্রামের শপথ গ্রহণের দিন।
রওশন এরশাদ আরো বলেন, ‘সরকারি বা বেসরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাজের নির্দিষ্ট সময় থাকবে এবং এর অতিরিক্ত সময় কাজ করাতে হলে ন্যায্য হারে বাড়তি অর্থ প্রদান করতে হবে যেন শ্রমিক-মেহনতি মানুষ তাদের পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত না হয় আর এটাই হোক এবারের মে দিবসের প্রত্যাশা।’
কোনো মানুষের অধিকারই আর নিশ্চিত নয় : খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য দেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মহান মে দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে খালেদা জিয়া এই আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নির্বাসিত, গণতান্ত্রিক প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশে এখন কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকারই আর নিশ্চিত নয়। এ জন্য এই অবস্থার অবসান করতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ছাড়া শ্রমজীবীসহ কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন স্বাভাবিকভাবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সাথে একাকার হয়ে যায়।’
বিএনপি চেয়ারপারসন রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসে শোচনীয়ভাবে নিহত ভাই-বোনদের কথাও গভীর বেদনার সাথে স্মরণ করেন।
বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সরকারে থাকাকালে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের কথা বাণীতে বর্ণনা করেন এবং ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে শ্রমজীবী মানুষের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিভিন্ন কর্মসূচি
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, ঐতিহাসিক ঘটনাসমৃদ্ধ মহান মে দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দুদিনব্যাপী (১ ও ৪ মে) কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মে দিবসের শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত মে দিবসের সব কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে সকাল সাড়ে ৭টায় রাজউক এভিনিউয়ের শ্রম ভবনের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হবে। শোভাযাত্রাটি দৈনিক বাংলা মোড় ও পল্টন হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হবে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন।
মে দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ৪ মে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সকাল ও বিকেলে দুটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কাউন্সিল শক্তিশালীকরণ : ভূমিকা, প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ও লেবার স্টাডিজ (বিলস) ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস। বিকেলে ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণে আইনি সুরক্ষা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারটির যৌথভাবে আয়োজন করবে কর্মজীবী নারী ও ওশি ফাউন্ডেশন।
জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত কর্মসূচির আলোকে জেলা পর্যায়েও মহান মে দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, জাতীয় শ্রমিক জোট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জাসদ, গণফোরাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে।