সুন্দরবন রক্ষার সাইকেল মিছিলে ছাত্রলীগের বাধা
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে সাইকেল মিছিল বের করতে পারেননি সাইক্লিস্টরা। আজ শুক্রবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দিয়ে তা পণ্ড করে দেন।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং গণসংহতি আন্দোলন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুন্দরবনকে বাঁচাতে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে আজ সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাইকেল সঙ্গে নিয়ে জড়ো হন স্বতঃস্ফূর্ত মানুষ ও সাইক্লিস্টরা। প্রস্তুতি গ্রহণ করেন প্রতিবাদী সাইকেল মিছিলে অংশ নেওয়ার। সাইকেল মিছিলটি উদ্বোধন করতে এবং সংহতি প্রকাশ করতে উপস্থিত হন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতা ছাড়াও অনুষ্ঠানে সংহতি জানাতে উপস্থিত হন বাম দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থাকলেও সাইকেল মিছিল বের করতে পারেনি সাইক্লিস্টরা। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমর্থন জানিয়ে একই স্থানে মানববন্ধন করে শহীদ মিনার এলাকা ঘিরে রাখেন তরুণ সংঘের ব্যানারে ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী।
কয়েক দফা সাইকেল মিছিল বের করার চেষ্টা করলে তরুণ সংঘের বাধায় তা বের করতে পারেননি সাইক্লিস্টরা। মিছিলে বাধা দেওয়ায় কয়েক দফায় উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত মিছিলে ব্যর্থ হয়ে শহীদ মিনার চত্বরেই রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন সাইক্লিস্টরা।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা নীরব দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে জোড় করে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার এমন অভিযোগ করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এভাবে ঘেরাও করে প্রতিবাদটাকে তারা দমাতে পারবে না। প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর তো ঘেরাও করে রেখে, নিপীড়ন চালিয়ে দমন করা যাবে না। এটাতে আমি মনে করি, সরকারের যে নৈতিকভাবে পরাজয় হয়েছে সেটা হাতেকলমে, চোখে আঙুল দিয়ে সরকার দেখিয়ে দিচ্ছে। এবং এই আন্দোলনে যে ব্যাপক জনসমর্থন আছে, সেটাতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আজকে যে তারা সে রকম কর্মসূচি নিয়েছে সেটাই প্রমাণ করে।’
অন্যদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা এই সরকার বলে কিন্তু গণতন্ত্রের প্রকৃত নমুনা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তরুণরা এখানে সংগঠিত হয়েছে, কিন্তু তারা নানা ধরনের হুমকি, ভীতি এবং শারীরিক পেশিশক্তি প্রদর্শন করে এখানে আসলে জনগণের যে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, তারা সুন্দরবনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য তাদের যে অধিকার সেই অধিকারকে আজকে হরণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
এদিকে সাইকেল মিছিল করতে না পেরে বেশ কিছু সময় ধরে রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাইক্লিস্টরা।
জাতীয় কমিটির নিন্দা প্রতিবাদ
এদিকে সাইকেল মিছিলে বাধা দেওয়ার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সাইকেল র্যালির মাধ্যমে সুন্দরবন রক্ষার পক্ষে তরুণদের মতপ্রকাশের কর্মসূচির ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশের সন্ত্রাসী হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে আহূত এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এ রকম ন্যক্কারজনক হামলার মাধ্যমে সরকার নিজেদের নৈতিকভাবে এবং যুক্তিতে পরাজিত হিসেবে প্রমাণ করল। একই কারণে গত কিছু দিনে খুলনা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, বগুড়াতেও সরকারি বাহিনী সুন্দরবন রক্ষার সমাবেশ ও মিছিল নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এক মাস পার হয়ে গেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা দিলীপ রায়কে এখনো আটক রাখা হয়েছে। যুক্তিতে পরাজিত হয়ে, দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সুন্দরবন বিনাশে সরকার শক্তি প্রয়োগের পথ গ্রহণ করছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের নিন্দা
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালামও এক যুক্ত বিবৃতিতে আজ সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যাত্রারত সুন্দরবন বাঁচানোর সাইকেল মিছিলে ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশের হামলা এবং আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গণসংহতি আন্দোলন জানিয়েছে, এ প্রকল্পের শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিবাদ করে আসছে তেল-গ্যাস কমিটি। তার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে এই প্রকল্পের ভয়াবহতা জেনে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যক্তি প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন। এ ধারাবাহিক সংগ্রামের অংশ হিসেবে আজকের সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক সাইকেল মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। কিন্তু ছাত্রলীগ কর্মসূচিতে বাধা দেয়, একপর্যায়ে তারা হামলা করে। ছাত্রলীগের সঙ্গে যুগপৎভাবে পুলিশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জলকামান ছোড়ে এবং সাইকেলও আটক করে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ সুন্দরবন বাঁচানোর সাইকেল মিছিলে হামলার ন্যক্কারজনক ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দাবি করেন। তাঁরা বলেন, দেশধ্বংসী-প্রকৃতিবিধ্বংসী রামপাল প্রকল্পে সরকার মরিয়া। একতরফা নির্বাচনকারী এই সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় যে কোনোভাবে টিকে থাকতেই ভারতের এনটিপিসির রামপাল প্রকল্প সম্পন্ন করতে চায় কোনো রকম মতামতের তোয়াক্কা না করে।