জঙ্গিবাদ করে ইসলাম কায়েম করা সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, জঙ্গিবাদ করে ইসলাম কায়েম করার কোনো পথ নেই। জঙ্গিবাদ করে যারা ইসলাম কায়েম করতে অন্ধ, তারা জানে না যে জঙ্গিবাদ করে ইসলাম ধর্ম কায়েম করা সম্ভব নয়। বরং তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবে বিশ্বজুড়ে। একটি গোষ্ঠী দেশের মেধাবী তরুণদের ইসলাম কায়েম এবং বেহেশত যাওয়ার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে তাদের জঙ্গিবাদে লিপ্ত করছে।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর অডিটোরিয়ামে এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় ‘শিক্ষার উন্নত পরিবেশ, জঙ্গিবাদমুক্ত শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ করে বিদেশিদের টার্গেট করে মেরে ফেলা হচ্ছে। এর কারণ হলো আমাদের দেশের মানুষ যাতে করে দেশের বাইরে কোথাও শিক্ষা গ্রহণ, চিকিৎসাসেবা না নিতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ করে এতে দেশের অর্থনৈতিক দিকে একটি বিশেষ প্রভাব পড়বে। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব হামলা বা জঙ্গিবাদ করছে, তারা না দেশের স্বার্থে, না ইসলামের স্বার্থে কাজ করছে। তারা একটি বিভ্রান্তিমূলক তথ্যর মাধ্যমে দেশকে কলুষিত করার চেষ্টায় লিপ্ত।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, যারা বোমা হামলা করছে তারা নিজেরাই জানে না তাদের বন্ধু কারা আর শত্রু কারা। তারা বোমা মেরে মানুষ মারার নীতিতে বিশ্বাসী। তারা যদি ধর্মে বিশ্বাস করত, তাহলে শোলাকিয়ার ঈদগাহে হামলা করে মুসল্লিদের মারার পরিকল্পনা করত না।
মন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে জঙ্গিদের আখড়া ছিল। এর মধ্যে আফগানিস্তানে জঙ্গি কিছুটা হলেও উৎখাত হয়েছে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই খবরের মাধ্যমে শুনতে পাই পাকিস্তানে বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলায় শত শত মানুষ নিহত হচ্ছে। পাকিস্তান তো মুসলিমপ্রধান দেশ। তাহলে সে দেশে কেনই বা বোমা হামলা হচ্ছে। এর মানে হলো যারা হামলা করছে, তারা নিজেরাই জানে না তারা কী করছে। শুধু এশিয়ার দেশগুলোতেই নয়, হামলা হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতেও। আপনারা জানেন ফ্রান্স ও ইতালিতেও বোমা হামলা হয়েছে, মানুষও মরেছে। আল্লাহ মানুষ হত্যা করার এখতিয়ার কাউকে দেয়নি। অতর্কিত মানুষ হত্যা নিয়ে সমগ্র জাতি আজ চিন্তিত। বাংলাদেশ শিক্ষা পরিবার একটি বৃহৎ অংশ নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে ২৫ লাখ রয়েছে শিক্ষক এবং পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী। আমরা সবাই মিলে যদি জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে হুঁশিয়ারি দেই, তাহলে দেশ থেকে আগাছাগুলোকে সরিয়ে ফেলা যাবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আপনাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্তরিক হওয়ার চেষ্টা করুন। মাসে একটি করে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী সভা করুন। এতে শিক্ষার্থীদের মনে জঙ্গিবাদ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। আপনারা আপনাদের প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন। এতে শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায়।
মতবিনিময় সভায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শামসুল হুদা, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচারক বিল্লাল হোসেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম ইমামুল হক, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস, বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম রুহুল আমিন, বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান প্রমুখ।
মতবিনিময় সভা শেষে মন্ত্রী বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ডিজিটাল কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এর আগে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের সামনে ‘মাদকমুক্ত করব দেশ, শেখ হাসিনার নির্দেশ’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত মাদকবিরোধী মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।