স্মার্টকার্ড পেলেন ‘ছিটবাসী’
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পেলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অধুনালুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার ভোটাররা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ আজ সোমবার দুপুরে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেন।
দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আড়ম্ভরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। আর এর মধ্য দিয়ে ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার এক বছর দুই মাস পর ভোটার হলেন সেখানকার বাসিন্দারা।
আজ প্রথম দিনে সদ্য ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া অধুনালুপ্ত ছিটবাসীর ২১৯ জনসহ ৯৮৫ জনের মাঝে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেলার অভ্যন্তরে বিলুপ্ত অন্যান্য ছিটমহলের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভোটারদের মাঝে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।
এ উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, মো. শাহ নেওয়াজ, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন, পুলিশ সুপার মো. তবারক উল্লাহ প্রমুখ।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া দাসিয়ারছড়ার ছোট কামাত গ্রামের ইব্রাহীম খাঁ (৬০) জানান, ‘শেষ বয়সে এসে বাংলাদেশের পরিচয়পত্র পেয়েছি। এখন থেকে ভোট দিতে পারব, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে সব জায়গায় ঘুরতে পারব। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
দাসিয়ারছড়ার মোছা. চম্পা খাতুন (৩৫) বলেন, ‘আগে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভুয়া পরিচয়ে লেখাপড়া করত। এখন আর ভুয়া পরিচয়ে লেখাপড়া করতে হবে না। আমরা এই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে দেশের সব সুবিধা ভোগ করব।’
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে মহা আনন্দিত মছিরন বেগম ও মজনু শেখ। আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁরা জানান, এই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তাঁরা এখন বাংলাদেশের প্রকৃত নাগরিক হলেন।
ছিটমহলবাসীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে সোচ্চার ছিল বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার মাধ্যমে অবসান হয়েছে পরিচয়হীনতার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নাগরিকত্বের সব মৌলিক অধিকার নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষ।
স্মার্টকার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘অধুনালুপ্ত ছিটমহলের মানুষের হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দিতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। আপনারা দীর্ঘ ৬৮ বছর অনেক কষ্ট করেছেন। এখন আর কষ্ট করতে হবে না। এই স্মার্ট কার্ড পাওয়ার মাধ্যমে আপনারা আপনাদের নাগরিক অধিকার পাবেন।’
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে বিলুপ্ত হয় ছিটমহল। এতে দুই দেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫১ হাজার মানুষ মুক্তির স্বাদ পায়। এর পর থেকে ছিটমহলের উন্নয়নে নানা কর্মকাণ্ড চললেও জাতীয় পরিচয় ছিল না তাদের। স্মার্টকার্ড পাওয়ায় বিলুপ্ত ছিটের মানুষ এখন ভোটাধিকার প্রয়োগ, ব্যাংক হিসাব, চাকরির আবেদন, বিয়ে ও তালাক নিবন্ধনসহ ২২টি সেবাখাতের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ১৪ হাজার ২১১ জন মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পায়।
বাংলাদেশ পায় ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ২৫৮ একর জমি এবং ভারত পায় ৫১টি ছিটমহলের সাত হাজার ১১০ একর জমি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রামে ছিল ১২টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি এবং নীলফামারী জেলায় চারটি। অপরদিকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় ৪৭টি এবং জলপাইগুড়ি জেলায় ছিল চারটি।