এবার কলেজে ছুরি নিয়ে ছাত্রীকে ধাওয়া
পাঁচ-ছয়জন কলেজছাত্র। হাতে ছুরি। এই নিয়ে ধাওয়া দেয় সহপাঠী এক ছাত্রীকে। প্রাণপণে দৌঁড়াতে থাকে ওই ছাত্রী। চিৎকার করে বাঁচাও, বাঁচাও বলে।
এটি সিনেমার কোনো দৃশ্য নয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সরকারি কে এম কলেজের ঘটনা।
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্যরা এগিয়ে আসায় অল্পের জন্য রক্ষা পায় ওই ছাত্রী। তারা ধারালো ছুরিসহ ধরে ফেলে বখাটে দুই ছাত্রকে। তবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বখাটেদের অন্য সহযোগীরা।
এই ঘটনার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক ওই দুই ছাত্রকে এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করেছে তাঁদের।
দণ্ডাদেশ পাওয়া দুজন হলেন সরকারি কে এম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সবুজ মিয়া (২০) ও সুজন মোল্যা (১৮)। সবুজের বাড়ি ভাঙা পৌর সদরের ভাড়ইডাঙ্গা গ্রামে। সুজনের বাড়ি উপজেলার আলগী ইউনিয়নের সুয়াদি গ্রামে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজে ভর্তির পর থেকে দণ্ডাদেশ পাওয়া দুই ছাত্র ও তাদের সহযোগীরা ওই ছাত্রীকে কলেজ গেট, শ্রেণিকক্ষ ও কলেজ ক্যাম্পাসে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। আজ দুপুরে শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে ওই ছাত্রী শ্রেণিকক্ষে বসে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় সবুজ ও সুজন তাঁদের কয়েকজন সহযোগী নিয়ে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। একপর্যায়ে তার মাথার স্কার্ফ টেনে খুলে ফেলে এবং ব্যাগে থাকা একটি দামি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় অন্য সহপাঠীরা এর প্রতিবাদ করলে বখাটে ছাত্ররা তাদের কাছে থাকা ধারালো ছুরি দেখিয়ে ছাত্রী ও তার সহপাঠীদের কোপানের হুমকি দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ছাত্রী শ্রেণিকক্ষ থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে শিক্ষকদের কক্ষের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বখাটেরাও ছুরি নিয়ে ছাত্রীকে ধাওয়া দেয়। ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে তাঁর চিৎকার শুনে কলেজের অন্য শিক্ষার্থী ও কয়েকজন শিক্ষক ছুটে গিয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার এবং একটি ধারালো ছুরিসহ সবুজ ও সুজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। বখাটেদের অন্য সহযোগীরা ছাত্রীর মোবাইল ফোনসেট নিয়ে পালিয়ে যায়।
সরকারি কে এম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোসায়েদ হোসেন ঢালী বলেন, ‘কলেজের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় আমরা কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহায়তায় ছাত্রীকে উদ্ধার এবং দুই উত্ত্যক্তকারীকে একটি ধারালো চাকুসহ আটক করতে সক্ষম হই। পরে ভাঙ্গা থানা পুলিশে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে ওই ছাত্রদের আটক করে। বিষয়টি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) পূরবী গোলদারকে জানালে তিনি কলেজে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। প্রমাণ সাপেক্ষে তিনি সবুজ ও সুজনকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। আর কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই দুই ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।’
যোগাযোগ করা হলে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, ছাত্রী উত্ত্যক্তের ঘটনায় দণ্ডাদেশ পাওয়া দুজনকে ভাঙ্গা থানায় আনার পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।